Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোর ট্রফিক বিভাগ: ‘ভালো সাজতে’ একবছরে মামলা সাড়ে ৩৮ হাজার


১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:৪৮

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

যশোর: যশোরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও কার্যত এর তেমন কোনো সুফল মিলছে না। তবে উদ্যোগের অংশ হিসেবে যানবাহনকে নিয়ম মানাতে মামলা ও জরিমানা আদায় চলছে জোরেশোরে। এক্ষেত্রে অনেকটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মধ্যে। যে যতো বেশি মামলা দিতে পারেন তিনিই ঊর্ধ্বতনদের কাছে ততো বেশি ‘ভালো’ কর্মকর্তা। তাই সকাল থেকে শুরু হয় ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলা দেওয়ার প্রতিযোগিতা।

বিজ্ঞাপন

ট্রাফিক আইনে যশোরে প্রতি মাসে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। প্রতি মাসে মামলা হচ্ছে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, অহেতুক মামলা দিতে কোনো সার্জেন্টকে উৎসাহিত করা হয় না। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলেই মামলা দেওয়া হয়। মূলত সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যই মামলা দেওয়া হয়।

জানা যায়, গত বছরের (২০১৮) জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা দেওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৬১৫টি। বিপরীতে জরিমানা করা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেল, হালকাযান ও ইজিবাইকের ক্ষেত্রে। যানবাহন আটক করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৭২ টি।

যশোর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট ও ইন্স্যুরেন্স না থাকা, চালকসহ তিন আরোহীর কারণে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, যথাযথ কাগজপত্র না থাকা, যত্রতত্র পার্কিং, রুট পারমিট ও ফিটনেস না থাকার কারণে মামলা হয়েছে কাভার্ডভ্যান, ও হালকা যানের বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে একজন মোটরসাইকেল চালকের নামে একাধিক মামলা দেয়ারও নজির স্থাপন করেছে যশোর ট্রাফিক পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

প্রতি মাসে মামলার টার্গেট কত, যশোর ট্রফিক পুলিশের পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেনের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন কেন। কোনো কিছু জানতে হলে এসপি অফিস থেকে জেনে নেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেন্ট জানান, মামলা কম হলেই দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাকে অদক্ষ অফিসার হিসেবে ভাবা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, চালকদের কাছ থেকে মামলার সর্বোচ্চ জরিমানার টাকা আদায় করা হলেও জমা দেওয়া হয় সর্বনিম্ন জরিমানার টাকা। যে কারণে যানবাহনের চালকদের জরিমানা পরিশোধের কোনো রিসিট দেওয়া হয় না যশোর ট্রফিক অফিস থেকে।

যশোর ট্রাফিক ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা যায়, জনবল কম থাকায় আগে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খেতে হতো। এখন জনবল পর্যাপ্ত থাকায় ঝামেলা কম হয়। বর্তমানে যশোর ট্রফিক বিভাগে ৭৩ জন কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের ৫টি পদের বিপরীতে ৫ জনই কর্মরত আছেন। সার্জেন্টের ৯টি পদের বিপরীতে ৫ জন, টিএসআইয়ের ৩টি পদের বিপরীতে ২ জন, এটিএসআইয়ের ১০টি পদের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত আছেন। এছাড়া কনস্টেবল কর্মরত রয়েছেন ৫১ জন।

চালক ও আরোহীদের অভিযোগ, যেকোনো একটা সুযোগ পেলেই মামলা ঠুকে দেন সার্জেন্টরা। কখনও কখনও অযথা হয়রানিমূলক মামলাও দেওয়া হয়। মোটরসাইকেল চালক সেলিম জানান, সবকিছু ঠিক থাকার পরও কাগজ তখনি দেখাতে না পারা, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা বা সার্জেন্টের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ উত্থাপন করে মামলা দেওয়া হয়। একইভাবে প্রতিদিনই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

যশোর ট্রাফিক বিভাগ জানায়, দিন দিন মানুষের গাড়ি বেড়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। যে কারণে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক নামিদামি স্কুল, শপিংমলের পার্কিং নেই। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয়। প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশকে এসব ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়।

তবে শুধু মামলা দিয়ে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব না দাবি করে স্থানীয়রা বলেন, ‘শুধু মামলা ও জরিমানা করে মানুষের আচরণের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রাফিক পুলিশকে অনভিপ্রেত ব্যবহার পরিবর্তন করে জনবান্ধব হতে হবে। একই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ ও শপিংমলেও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর