দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাস রোধে অনুশাসনমূলক বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা
১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:০৬
।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশ থেকে জনগণের প্রতি আহ্বান জানাবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাস নির্মূলে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুশাসনমূলক বার্তাও দেবেন তিনি। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ২১ অঙ্গীকারে একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণাকে আগামী দিনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিজয় সমাবেশ থেকে তিনি বিশেষ বার্তা দেবেন। আওয়ামী লীগ একাধিক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে এই তথ্য জানান।
শনিবার (১৯জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় বারের মতো দলের অর্জিত এই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সমাবেশ মাঠে ছোট-বড় ৫০-এর বেশি নৌকা ও বৈঠাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে। সমাবেশটি মহাসমুদ্রে রূপ দিতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগরের দলীয় নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
এ লক্ষ্যে শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বিজয় সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ওবায়দুল কাদের সার্বিক কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিজয় সমাবেশে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশেও বিশেষ বার্তা দেবেন বলে জানান। কণ্ঠশিল্পী মমতাজের গানে গানে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত হবেন টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নির্বাচনে সাড়া জাগানো ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানটিরও পরিবেশনা শুনবেন। পরিবেশনা শেষে বেলা আড়াইটায় মূল বক্তব্য প্রক্রিয়া শুরু হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বক্তব্যের শুরুতে একটি অভিনন্দনপত্র পাঠ করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর অন্য নেতাদের বক্তব্য শেষে জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিজয় বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা। তিনি তিনটার দিকে বিজয় সমাবেশে মঞ্চে উপস্থিত হবেন। মূল মঞ্চে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারাসহ মহাজোটের নেতারাও থাকবেন বলে দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করবেন দলের সভাপতি। বিশেষ করে মাদক নির্মূলে যে যুদ্ধ তাতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা আসবে এ সমাবেশ থেকে। ১৯ জানুয়ারি নির্বাচনে গণজোয়ারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়ে স্মরণকালের বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। ৩০ ডিসেম্বর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের রেকর্ড করলেও বিজয় মিছিল না করার ঘোষণা দেয় দলটি। কিন্তু বিজয় আনন্দ থেকে নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করতে চায় না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তাই আগামীকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় সমাবেশে করার ঘোষণা দেয়।
বিজয় সমাবেশ থেকে দেশবাসীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বিজয় সমাবেশকে বিজয় আনন্দে রূপ দিতে বরণ্যে শিল্পীরা দুপুর ১২টার পর থেকে বিভিন্ন গান পরিবেশন করবেন। এ লক্ষ্যে মূল বিজয় মঞ্চের সামনে পৃথকভাবে আরেকটি মঞ্চ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ডে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ইশতেহারের মলাটের রঙের আদলে সজ্জিত করা হয়েছে। বেলা ১১টার পর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমি গেট, রমনা কালি মন্দির গেট, টিএসসি গেট, চারুকলা গেট দিয়ে প্রবেশ করবে।
আরও পড়ুন: বিজয় সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী: কাদের
রমনা পার্কের পাশের গেটটি ভিআইপি গেট হিসাবে বরাদ্দ থাকবে। এতে প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতা, দলীয় সংসদ সদস্য ও মহাজোটের নেতারা প্রবেশ করবেন। বিজয় সমাবেশে একে একে গান পরিবেশন করবেন শিল্পী মমতাজ বেগম, আঁখী আলমগীর, রফিকুল আলম, ফাহমিদা নবী, কল্পনা মজুমদার, জলের গান ও ‘জিতবে এবার নৌকা’ গানের শিল্পীরা। মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন দলের প্রচাার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচাার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
বিজয় সমাবেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কী বার্তা দিতে পারেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দশ বছরে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে সবক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বাংলাদেশ তার অবিস্মরণীয় নেতৃত্বে বিশ্বে এক মযার্দার আসনে পৌঁছতে পেরেছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। ’
আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘আমরা আগামী দিনে কী করতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, এটাও জানান দেবো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবার কাছে সহযোগিতা, পরামর্শ ও উপদেশ চাওয়ারও সম্ভাবনা আছে আমাদের নেত্রীর। একদিকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব ও আরেকদিকে জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন তিনি। এছাড়া, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সব শ্রেণি পেশার মানুষের পরামর্শ ও সহযোগিতা চাইবেন তিনি।’
বিজয় সমাবেশের মূল মঞ্চ এবার দলের একাদশ জাতীয় নিবাচনি ইশতেহারের মূল মলাটের আদলে করা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য আরও বলেন, ‘ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য আমাদের যে অঙ্গীকার, আমরা তা জনগণকে জানান দিতে চাই। আমরা নির্বাচনি অঙ্গীকার করেছি, জনগণ বিশ্বাস করে আমাদের ভোট দিয়েছে। এটা আমরা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন করার জন্য জনগণের পরামর্শ ও সহযোগিতা চাইব।’
আরও পড়ুন: গানে গানে শুরু হবে আ. লীগের সমাবেশ
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কোনো বিশেষ বার্তা বা দিক-নির্দেশনা থাকবে কি না, জানতে চাইলে মতিন খসরু জানান, ‘অবশ্যই, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নেত্রীর অনুশাসন থাকবে, আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্কতা থাকবে। দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতি—এই তিনটি বিষয়ে আমাদের নেত্রীর কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে জানান, ‘শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো ও চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। সেই লক্ষ্য রেখে আগামীকাল বিজয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, বিজয় মহাসমাবেশ মহাসমুদ্রে পরিণত হবে। কারণ বাঙালির জীবনে বাঙালি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ জয়লাভ করেছে। এই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি ছিল আমাদের জাতীয় জীবনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মতো আরেকটি জাতীয় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জয়লাভ হয়েছে। তাই এই জয়লাভে আনন্দ-উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে, প্রত্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ’
আরও পড়ুন: নির্বাচনের সাফল্যে ১৯ জানুয়ারি বিজয় সমাবেশ করবে আ. লীগ
জাহাঙ্গীর কবীর নানক আরও বলেন, ‘মানুষের জীবনে স্বপ্ন দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামীকাল সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশবাসীকে এই ঐতিহাসিক বিজয় মহাসমাবেশ থেকে কথা বলবেন। জাতির উদ্দেশে বিজয় বার্তা ও দিক-নির্দেশনা দেবেন। তিনি বাঙালি জাতিকে তার আগামী ৫ বছরের কর্মপরিকল্পনা শুধু নয় ২০২১ সালে তার কর্মপরিকল্পনা, ২০৪১ সালের কর্মপরিকল্পনা ও আগামী শত বছরের তার কী পরিকল্পনা রয়েছে, সেই পরিকল্পনার কথা বলবেন। সেই পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ’
বিজয় সমাবেশে কেমন লোকসমাগম হতে পারে বলে আপনারা ধারণা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ‘আগামী কাল এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় সমাবেশ মাঠ ছাপিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট জনতার স্রোতে পরিণত হবে।’
এদিকে, বিজয় সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘বিজয় সমাবেশকে জনতার বিশাল জনসমুদ্রে রূপ দিয়ে মহানগরের প্রতিটি থানা,ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে বর্ধিত সভাসহ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহানগর উত্তরের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক লোকসমাগম উপস্থিত করতে পারবো বলে আশা করছি।’
এই প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সস্রাট বলেন, ‘মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে বিজয় সমাবেশে লক্ষাধিক যুবক-তরুণ লাল-সবুজ গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে সমাবেশে উপস্থিত হবেন। ’ আগামীকালের বিজয় সমাবেশে তরুণ-যুবা— সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ নেত্রীর নির্দেশনা শুনতে অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমএনএইচ