Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্লাস্টিক পণ্যের গুদামে আগুন, ‘রহস্যজনক’ বলছেন এলাকাবাসী


১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:৪৪

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর একে খান মোড়ে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্যের গুদামে লাগা আগুন প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি।

তবে এই অগ্নিকাণ্ডকে রহস্যজনক বলছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, মহাসড়কের পাশে ভিক্টোরিয়া জুটমিলের গুদামের জমিতে কনটেইনার ইয়ার্ড বানানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে।

নগরীর আগ্রাবাদে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ভিক্টোরিয়া জুটমিলে আগুন লাগার সংবাদ আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।

ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া জুটমিলের গুদামের চারপাশ ঘিরে পানি ছিটানো হয়েছে। চারপাশে আগুন নিভে গেছে। গুদামের মাঝখানে এখনও আগুন জ্বলছে। তবে সেটা ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। মাঝখানের আগুনটাও কিছুক্ষণের মধ্যে আশা করি নেভানো সম্ভব হবে।’

অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা সুজন নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসা থেকে আমরা প্রথমে অল্প অল্প কালো ধোঁয়া উড়তে দেখি। মনে হয়, মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো গোডাউন এলাকায়। আমাদের বাড়িঘরেও আগুনের তাপ লাগতে শুরু করে। এলাকার লোকজন সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তবে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষা পেয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া ভিক্টোরিয়া জুটমিলের গুদাম ভাড়া নিয়ে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানি তাদের প্লাস্টিক পণ্য রেখেছিল। আরেক অংশে কনটেইনার ইয়ার্ড আছে। মূলত প্লাস্টিক পণ্যের গুদামেই আগুন লেগেছে।’

বন্ধ হয়ে ভিক্টোরিয়া জুটমিলের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে ফেরদৌস মাহমুদও এ কে খান মোড়ের অদূরে কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০১ সালে জুটমিল বন্ধ হয়ে যায়। মালিক প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি গ্রুপ গুদামের একাংশ প্রাণ-আরএফল গ্রুপ, ইউনিলিভারসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছে। আরেক অংশে সামিট গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করেছে। কনটেইনার ইয়ার্ড বানাতে গিয়ে তারা সেখানে একটি পুকুর ছিল, সেটি ভরাট করেছে। তাদের অগ্নিনির্বাপক কোনো ব্যবস্থা নেই। এখন আগুন লাগার পর এলাকার দুটি পুকুরের সব পানি সেচে ফেলেছে। এলাকাবাসী প্রথমে বাধা দিলেও পরে পুলিশ এসে ফায়ার সার্ভিসের পাম্প বসিয়ে পানি তুলে নেয়। নিজেরা পুকুর ভরাট করে এলাকাবাসীর পুকুরের পানিও নিয়ে গেছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া জুটমিলের পুরো অংশে কনটেইনার ইয়ার্ড বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু গুদামের ভাড়াটিয়াদের সরানো সম্ভব হচ্ছিল না। এছাড়া কনটেইনার ডিপো নিয়ে এলাকাবাসীরও আপত্তি আছে। কারণ ডিপো হলে মহাসড়কে যেমন সবসময় যানজট তৈরি হবে, এলাকার লাখ, লাখ মানুষের নিরাপদে চলাচলও বাধাগ্রস্ত হবে। সব মিলিয়ে এলাকাবাসীর কাছে এই অগ্নিকাণ্ড রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীর এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর তদন্ত হবে। এর আগে এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া সঠিক হবে না।’

সারাবাংলা/আরডি/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর