Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৮ বছরে ‘রকমারি’


১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:০০

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

ঢাকা: আজ থেকে ৭ বছর আগে ইন্টারনেট থেকে জিনিসপত্র কেনার প্রচলন বাংলাদেশে তেমন একটা ছিলো না। সে তখনই অন্যরকম গ্রুপের মালিক মাহমুদুল হাসান সোহাগ অনলাইনে বইয়ের দোকান দিলেন। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে ব্যাপারটা এতটাই অদ্ভুত ছিলো, যে তার সঙ্গে মানুষের মানিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছে।

‘ইন্টারনেট থেকে বই কিনবো, ঠিকমত ডেলিভারি দেবে তো?’, ‘বাজে কোয়ালিটির বই গছিয়ে দেবে না তো?’, নানারকম সংশয় ছিলো মানুষের মধ্যে। সংশয় এবং কৌতূহলের মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে কিছু মানুষ কেনা শুরু করলেন বই। তার পরের গল্পটা সুন্দর। রকমারি নিজেদের প্রচারণা যতটা করেছে, মানুষ তার চেয়ে বেশি করে দিয়েছে। বইপড়ুয়া মানুষরা নিজেদের মধ্যে আলাপে রকমারির প্রসঙ্গ তুলবে না, এমন ঘটনা কমই ঘটেছে!

রকমারির সেই শুভ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই সময়ে আরও কিছু উদ্যোগ এসেছিলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে বই পৌঁছে দিতে। তবে দীর্ঘ সাত বছরে অনেক প্রতিষ্ঠানই হারিয়ে ফেলেছে জৌলুস, অনেকেই তাদের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে রয়েছে, কাগজের বইয়ের বদলে অনেকেই ই-বুক, পিডিএফ পড়ছেন, এর মধ্যেও রকমারি নিজেদের জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রবলভাবে।

সাত বছর আগের এই দিনে, এই ১৯ জানুয়ারি রকমারি যখন যাত্রা শুরু করেছিলো, তখন বাংলাদেশে কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছিলো না। আর আজ জীবনধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় সবকিছুই অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। সেই দিক থেকে রকমারিকে বাংলাদেশের ই-কমার্স আন্দোলনের অগ্রদূত বলাটা বাতুলতা হবে না মোটেও!

রকমারি যে শুধুমাত্র ই-কমার্স আন্দোলনের পথিকৃত, তা নয়। নতুন নতুন চিন্তা এবং উদ্যোগের সঙ্গেও পরিচয় করিয়েছে রকমারি। বইয়ের মার্কেটিংকে নিয়ে গেছে নতুন পর্যায়ে। রকমারির বই বিষয়ক ই-মেইলের অনেকগুলিই সাহিত্যমান সম্পন্ন। কখনও চিঠির আঙ্গিকে, কখনও গল্পের আঙ্গিকে, কখনও সংলাপের মাধ্যমে, কখনও বিভিন্ন চরিত্রে চিত্রিত ই-মেইলগুলি খুব কম মানুষই স্প্যাম ফোল্ডারে রাখতে চাইবেন!

বিজ্ঞাপন

প্রতিযোগিতা নয় সহযোগিতা- এই নীতির অসাধারণ এক প্রদর্শন তারা দেখিয়েছে তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে অন্যান্য অনলাইন বুকশপগুলির নাম প্রচার করে। কখনও তারা লেখককে দিয়েই বই ডেলিভারির কাজ করিয়ে পাঠককে চমকে দেয়, কখনও রিভিউ উৎসবের মাধ্যমে পাঠাভ্যাসকে আরো পরিশীলিত করে। বই অর্ডার করা থেকে পাঠকের কাছে পৌঁছুনোর পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যেই আছে আন্তরিকতা এবং সুরূচির ছোঁয়া।

‘আপনার অর্ডারটি আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুত করে ডেলিভারি টিম এর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে রেডি করা হয়েছে আপনার পার্সেলটি। আশা করি আপনার পার্সেলটি খুব দ্রুতই পেয়ে যাবেন’, অর্ডার কনফার্ম হবার পর এমন মেইল পেয়ে ক্রেতা আশ্বস্ত হন। শুধু তাই না, ঢাকার মধ্যে নিজস্ব ডেলিভারিম্যান দিয়ে পার্সেল দেওয়ার আগে এসএমএস করে ডেলিভারিম্যানের নাম এবং সময় জানিয়ে দেওয়া হয়।

এসব কারণেই সেদিনের ছোট্ট স্টার্টআপটি আজকের অনলাইন বুকশপ আইকন। রকমারিতে ভালো ভালো বই পাওয়া যায়, রকমারি মানুষের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করছে, এই চমৎকার লক্ষ্য এবং দর্শন তো আছেই, সাথে সাম্প্রতিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার, এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের কারণেই রকমারি আজ ই-কমার্স জগতে এক অনন্য নাম।

মাত্র ১০০টি বই নিয়ে শুরু করা অনলাইন বুকশপটিতে আজ এন্ট্রি করা আছে এক লাখ সত্তর হাজার বই। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার পার্সেল পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। দিনে দিনে যে এই সংখ্যাটা আরও বেড়েই চলছে।

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর