দেশে আসছে হাইস্পিড ট্রেন, মিনিটে চলবে আড়াই কিলোমিটার
২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:১০
।। সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগ হচ্ছে সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচ। ঘণ্টায় এর গতি হবে ১৪০ কিলোমিটার। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ট্রেনগুলো আড়াই কিলোমিটার (২.৩৩ কিলোমিটার) গতিতে চললে সক্ষম। শুধু তাই নয় এই আসনগুলো থাকবে আরও আরামদায়ক। প্রতিটি কোচের আমদানিমূল্য ৫ কোটি টাকা।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ট্রেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পিটি ইন্ডাস্ট্রি কেরেতা এপি (ইনকা) থেকে কোচগুলো জাহাজে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রথম শিপমেন্টে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে ১৫টি কোচ। এরপর আরও দুটি শিপমেন্টে মোট ৫০টি ব্রডগেজ কোচ আসবে। এরপরে আরও ৯টি শিপমেন্টে আসতে থাকবে ২০০ টি মিটারগেজ কোচ।
রেলওয়ে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (সিএমই) হারুনুর রশীদ মঙ্গলবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিটি ইনকার কারখানা মাদিয়ুন থেকে কোচগুলো তাদের স্থানীয় বন্দর সুরাবায়াতে বড় লরিতে আনা হচ্ছে। বড় এসব লরিতে প্রতিদিন দুটি করে কোচ সুরাবায়া আনা হচ্ছে।’
২০ জানুয়ারি সুরাবায়া থেকে জাহাজ ছাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে। এরপর ১২ থেকে ১৫ দিনে এগুলো চট্টগ্রামে চলে আসবে। চট্টগ্রাম থেকে কোচগুলো বিশেষ ট্রলি বগির ওপর বসিয়ে রেললাইনে টাঙ্গাইল আনা হবে। এরপর ক্রেন দিয়ে ব্রডগেজ বগির ওপর কোচগুলো স্থাপন করে সৈয়দপুর নেওয়া হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে দুই ধাপে ট্রায়াল রান দেওয়া হবে। দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে কোচগুলো ট্রেন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।
রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগ জানায়, সবচেয়ে পুরাতন ব্রডগেজ কোচ যেসব ট্রেনে আছে সেখানে নতুন কোচগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। আর সব শিপমেন্ট পেলে আরও নতুন দুয়েকটি ট্রেন চালু হতে পারে।
নতুন কোচ কেনা প্রকল্প অনুযায়ী, আগামী এপ্রিলে আরও ২০০টি মিটারগেজ কোচ আসা শুরু হবে। ৯ শিপমেন্টে ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে সব কোচ আসা শেষ হবে।
নতুন এই কোচগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে আধুনিক সুবিধাযুক্ত করা বলে জানান সিএমই হারুনুর রশীদ।
তিনি জানান, এই প্রথমবারের মত প্রতিটি কোচে বায়োটয়লেট থাকছে। এতদিন ট্রেনের টয়লেট থেকে বজ্য সরাসরি রেললাইনের ওপর পড়ত। এখন থেকে প্লেনের মত বায়ো-টয়লেট পদ্ধতি থাকবে এসব কোচে। যাতে রেললাইনে পড়বে না ময়লা। পরে এগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে ডিসচার্জ করা হবে। এ ব্যবস্থায় ট্রেনে ব্যাকটেরিয়া ও দূষণ হবে না।
রেল ভবন সূত্র, ইন্দোনেশিয়া থেকে আসতে থাকা নতুন কোচগুলো স্টেনলেস স্টিলের। ছাদে রুফ মাউন্টেট পদ্ধতি থাকবে। যাতে ছাদ ভর্তি মানুষ হলেও ট্রেন বিকল না হয়। নতুন কোচগুলোতে আসনগুলো আগের চেয়ে বেশি আরামদায়ক থাকবে। রিক্লেনার চেয়ার বসানো হয়েছে সব কোচে। যেখানে পা এবং হেলান দেওয়ার আরামদায়ক সুবিধা থাকে। আর এসিবাথের কেবিনগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে নতুন কোচে। এতে বেডরেস্ট দিনের বেলায় যেভাবে থাকবে রাতে তা বিছিয়ে দিলে ছোট খাটের মতো হয়ে যাবে। আর কেবিনে উপরের সিটের উঠার জন্য আগের স্টিলের মই বাদ দিয়ে এবার সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। যা আগের কোনো ট্রেনে ছিল না।
সিমই হারুনুর রশিদ জানান, আগের ট্রেনগুলোর কোচে ছাদ থেকে লোকজন ডিস্ক ঘুরিয়ে দিয়ে ট্রেন থামিয়ে দিতে পারত। নতুন এসব কোচে সে ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে ছাদ থেকে চেষ্টা করে রাস্তার মধ্যে ট্রেন থামাতে পারবে না।
প্রতিবন্ধীরা হুইল চেয়ার নিয়ে টয়লেটে ঢুকতে পারে এমনভাবে টয়লেট রয়েছে কোচগুলোতে। ট্রেনে উঠার জন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশস্ত দরজা করা হয়েছে। ট্রেনের ডায়নিংকারে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত সিট রাখা হয়েছে।
কোচে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ও ওয়াইফাই রাউটার হ্যাঙ্গার, টিভি মনিটর লাগানোর ব্যবস্থা থাকবে। কিছু সিট পর পর রয়েছে মোবাইল চার্জার। কোচগুলোতে এটেন্ডেন্ট বসার জন্য আলাদা চেয়ার যুক্ত করা আছে।
নতুন বগি কেনার প্রকল্প সূত্র জানায় ব্রডগেজ ও মিটারগেজ উভয় ধরনের কোচ কেনা হচ্ছে। যেখানে খরচ ধরা হয়েছে ২০০টি মিটারগেজ কোচে ৫৮০ কোটি টাকা। আর ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/এসএ/একে/এসএন