বাণিজ্যমেলায় ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’
২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:৫১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ প্যাভিলিয়ন। সব বয়সী দর্শনার্থী প্যাভিলয়ন থেকে জেনে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া নানা ইতিহাস। আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক, ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি, তৎকালীন সব অর্থনৈতিক চুক্তি ও খবরের কাগজে প্রকাশিত দলিল প্রদর্শিত হচ্ছে প্যাভিলিয়নটিতে।
প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরিও। সবমিলিয়ে তরুণ দর্শনার্থীরা মেলায় ঢুকে প্রথমেই প্যাভিলিয়নটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এ শ্রেণির মধ্যেই আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। শিশু-বৃদ্ধারাও মেলায় এসে জেনে নিচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস। কোনো কোনো দর্শনার্থী দুর্লভ এসব দলিল ধারণ করছে নিজের মুঠোফোনে। আবার কেউবা সময় বন্দি করছে সেলফিতে। বাণিজ্য মেলায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মেট্রেরেলের আদলে তৈরি মূল ফটক দিয়ে মেলায় ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়বে ডিজিটাল এক্সিপেরিয়েন্স সেন্টার। সোজা সামনের দিকে একটু এগুলেই বড় টাওয়ারটির ডান পাশে চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। এর সম্মুখভাবে রয়েছে ফুলেল চত্বর। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও ২৩ মার্চের জনসভার আলোকচিত্র সংবলিত ফেস্টুন। প্যাভিলিয়নটির সম্মুখভাগে বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন ছবিতে। আর গোলাকার বৃত্তে পানিতে শোভা পাচ্ছে সারি সারি নৌকা।
জানতে চাইলে বাণিজ্যমেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আবদুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কারাবরণ থেকে শুরু করে ৭১’র পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার পেপার কাটিং, বৈঠক ও সভা-সমাবেশের আলোকচিত্র প্যাভিলিয়নে তুলে ধরা হয়েছে। প্যাভিলিয়নটিতে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একটি বুক কর্নারও রয়েছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন করা হচ্ছে ডকুমেন্টরির মাধ্যমেও।’
মেলায় ঘুরতে আসা কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মো. পল্লব আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্যাভিলিয়নে ছবিগুলো পর্যায়ক্রমে সাজানো রয়েছে। ছবি সম্পর্কে নিচে বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ফলে আমরা ওই ছবিটি সম্পর্কে জানতে পারছি।’
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল কলেজের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘মেলায় ঢুকে প্রথমেই বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নে এসেছি। যেহেতু ঘুরতে এসেছি, আরও একবার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা আগ্রহ নিয়েই এখানে আসা।’
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা মাহমুদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্যাভিলিয়নে এসে খুব ভালো লাগছে।’
আমার স্ত্রী এবার প্রাইমারি স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষা দেবে। ইতিহাস সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা দিতেই তাকে প্যাভিলিয়নটি ঘুরে দেখাচ্ছি। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী কুলসুম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সবার জানার আগ্রহ ভেতরের। সব সময় উনার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। প্যাভিলিয়নে এসে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যনীতি সম্পর্কে নতুন করে জানলাম।’
কথা হয় মিরপুর থেকে আসা সাদিয়া আফরিনের সঙ্গে। স্কুল শিক্ষার্থী আফরিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। এবারের প্যাভিলিয়নটিও তাই বলছে। গতবার বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নাম দেওয়া হলেও এবার নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। প্যাভিলিয়নটিতে এসে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের অনেক তথ্যও জানতে পেরেছি।’
প্যাভিলিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, ‘এবার বঙ্গবন্ধুর বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ৭১’র পরবর্তী বিভিন্ন চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভের দলিলাদিও প্রদর্শিত হচ্ছে প্যাভিলিয়টিতে। রয়েছে বহির্বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক ও বিভিন্ন জনসভার আলোকচিত্রও। ছোট্ট এক পাশে দেখানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ওপর তৈরিকৃত ডকুমেন্টরি।’
প্যাভিলিয়নটির একটি ছবিতে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে ৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক সংস্থা গ্যাট (পরবর্তীকালে ডব্লিউটিও) এর সদস্যপদ লাভের জন্য প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন পেয়ে এই সংস্থার ৮১ তম সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। এছাড়াও দেশের প্রথম শিল্পনীতি, ৪ শত কোটি টাকা সাহায্য লাভের সম্ভাবনা, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক লাভ, ভারতে মাছ রফতানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত, আমদানি নীতির প্রতি অভিনন্দন, পাট সম্পর্কে গৃহীত সিদ্ধান্ত সন্তোষজনক এমন শিরোনামের বিভিন্ন পেপার কাটিং প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রদর্শিত হওয়া আরও কিছু পেপার কাটিংয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিল্লী বৈঠকে অধিকাংশ বিষয়ে প্রায় সমঝোতা, বাংলাদেশের জন্য ২৪ কোটি টাকা ভারতীয় ঋণ, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত করিতে হইবে, ২১৯ কোটি টাকার পণ্য আমদানি, বুলগেরিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর, বাংলাদেশ-মিশর পণ্য বিনিময় চুক্তি, দুইটি নতুন অর্থ সংস্থা গঠন, জাপান যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করবে, সীমান্ত-বাণিজ্য স্থগিত, একশত টাকার নোট অচল ঘোষণা, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি, আজ বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তি, বার্মা ৮০ লাখ টাকার পাট নেবে, পাটকে কৃত্রিম আঁশের প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা, সীমান্তে অবিলম্বে নৌ ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ, যাবতীয় বিলাস দ্রব্যের আমদানি বন্ধ, প্রায় ৪ কোটি রুবেলের চুক্তি স্বাক্ষও এবং বাংলাদেশ-রাশিয়া ১০ কোটি টাকার পণ্য বিনিময় চুক্তি। এছাড়া প্যাভিলিয়নটিতে তৎকালীন সময়ের নোট, বৈঠক এবং বঙ্গবন্ধুর অংশ নেওয়া জনসভার ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাণিজ্যমেলা