ফের বাড়ছে গোপালগঞ্জে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের ব্যয়
২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৩
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের জটিলতায় আবারও ব্যয় বাড়ছে গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পে। এই প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী অনুযায়ী ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদও। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী দুই বছর বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির তৃতীয় এই সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এরই মধ্যে তার প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ৪২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয় বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি। প্রথম সংশোধনীতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরে দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে করা হয় ৯৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এবারে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পটির জন্য।
এদিকে, মূল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। পরে এক বছর বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ করা হয় ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। পরে বিভিন্ন ধাপে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই কয়েক দফায় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয় প্রকল্পটির। তৃতীয় সংশোধনীতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে এই প্রকল্পটির।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১০ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালনের শর্তসাপেক্ষে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। শুরু থেকে গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ৮৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ৯০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিল্পায়নে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় এবং গোপালগঞ্জে বিদ্যমান শিল্পনগরীতে বরাদ্দযোগ্য প্লট না থাকায় গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ শীর্ষক মূল প্রকল্পটি ৪২ কোটি ১২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক অনুমোদন দেয় ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট। পরে জমির মূল্যবৃদ্ধির কারণে একনেক ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদন করে। পরবর্তী সময়ে রেল লাইন নির্মাণের জন্য রেল অধিদফতরের সঙ্গে অ্যাওয়াজ বদল জমি বুঝে না পাওয়ায় ও পিডিব্লিওডি’র নতুন রেট শিডিউল ২০১৪ কার্যকর হওয়ায় প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধন ৯৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব একনেকে অনুমোদিত হয় ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। রেলওয়ের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিষ্পত্তি না হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে এক বছর করে মোট ২ বছর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়।
এই প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে— ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৫ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৫০০ বর্গমিটার অফিস ভবন নির্মাণ, ১২৬ বর্গমিটার পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, ১ হাজার ৮০০ মিটার শিল্পনগরীর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, একটি মেইন গেট ও একটি গভীর নলকূপ স্থাপন, ৭৫০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৪ হাজার ৮৯০ মিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন।
প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, মূল প্রকল্পে শিল্পনগরীতে প্রবেশের জন্য পরিকল্পিত অ্যাপ্রোচ রোডের স্থানে রেল অধিদফতর কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া রেললাইন নির্মিত হওয়ায় অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণে জটিলতা তৈরি হয়। পরে অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের জন্য রেললাইনের ওপরে ওভারপাস বা নিচ দিয়ে আন্ডারপাস নির্মাণে রেল অধিদফতরের আপত্তি থাকায় বর্তমানে শিল্পনগরীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত রেলের বিদ্যমান আন্ডারপাস ব্যবহার করে নতুন অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেজন্য সংশোধিত লেআউট প্ল্যান অনুযায়ী অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণসহ পিডিব্লিউডি রেট ২০১৮ অনুয়ায়ী অসমাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করে ডিপিপি সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের সংশোধনীতে রেল অধিদফতর প্রস্তাবিত নিমতলি রোডে বিদ্যমান স্থাপনার ক্ষতিপূরণ ব্যয়ের সংস্থান, মাটি ভরাটের ব্যয়ের সংস্থান, অ্যাপ্রোচ রোডে গাইড ওয়াল নির্মাণ, প্রকল্পে লেআউট প্ল্যান সংশোধন, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, নববর্ষ ভাতা ও আইনি খরচ খাত অন্তর্ভুক্তকরণ এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, টুঙ্গীপাড়া-কাশিয়ানী রেলপথ নির্মাণের জন্য গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর আওতাভুক্ত জমি অধিগ্রহণের ফলে এরই মধ্যে অনুমোদিত গোপালগঞ্জ শিল্পনগরীতে প্রবেশের জন্য পরিকল্পিত অ্যাপ্রোচ রোডের স্থানটি পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নসহ অধিকাংশ অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও অ্যাপ্রোচ রোড এবং অ্যাপ্রোচ রোড সংশ্লিষ্ট কয়েকটি অবকাঠামো নির্মাণ অসম্পন্ন রয়েছে। সংশোধিত লেআউট প্ল্যান অনুযায়ী শিল্পনগরীতে প্রবেশের অ্যাপ্রোচ রোড ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগুলো নির্মিত হলে শিল্পনগরীটি চালু করা সম্ভব হবে এবং প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর/এসএন