যত্রতত্র ময়লা, সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাঙ্গামাটির পর্যটন!
২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২০
।। প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাঙ্গামাটি: কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য মলিন হয়ে যাচ্ছে ময়লা-আবর্জনায়। বিভিন্ন পর্যটন স্পট থেকে শুরু করে কাপ্তাই হ্রদ পর্যন্ত শিকার হচ্ছে এসব আবর্জনার দূষণের। স্থানীয়রা বলছেন, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার প্রবণতা ঠেকানো না গেলে শ্রী হারাবে রাঙ্গামাটি, কমবে পর্যটকদের আনাগোনা। এতে হুমকির মুখে পড়বে পর্যটন শিল্প। আর এর প্রভাব পড়বে পাহাড়ের অর্থনীতিতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দূর থেকে আসা পর্যটকরা তাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন দ্রব্য ফেলছেন নিজেদের আশপাশেই। অনেকেই লঞ্চ কিংবা ইঞ্জিনে চালিত নৌকায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাপ্তাই হ্রদে। সে অবস্থায় হ্রদেই ফেলছেন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল। এমনকি পর্যটকরা যেখানে বসে খাবার খাচ্ছেন, সেখানেই ফেলছেন উচ্ছিষ্ট খাবারের অংশ। এর মধ্যে রয়েছে বিস্কুটের প্যাকেট, পানির বোতল, চিপস, চানাচুর, পলিথিন, পাস্টিকের বোতল, ওয়ান টাইম খাবারের থালা ও গ্লাস। এসবের একটিও পচনশীল দ্রব্য নয়। ফলে সেগুলো জমে থাকছে এখানে-সেখানে।
কেবল পর্যটকরাই নয়, পর্যটন এলাকাগুলোতে যারা দোকানপাট গড়ে তুলেছেন, তারাও বিভিন্ন ধরনের ফেলনা জিনিসপত্র ফেলছেন আশপাশেই। রাঙ্গামাটি পর্যটন সেতুতে (ঝুলন্ত সেতু) ওঠার আগে এক জায়গায় দেখা গেল, অস্থায়ী এক ব্যবসায়ী বোটে করে বিক্রি করছেন আনারস। পর্যটক ও স্থানীয়রা যেমন সেই আনারস খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট ফেলছেন পানিতে, তেমনি দোকানিও আনারসের খোসাসহ অন্যান্য উচ্ছিষ্ট ফেলে দিচ্ছেন বিক্রির স্থানেই।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্থানীয় আনারস বিক্রেতা জানালেন, উচ্ছিষ্টগুলো নিয়ে যান বাসায়। কিন্তু পানির সঙ্গে সেগুলো মিশে যাওয়ার দৃশ্য দেখিয়ে জানতে চাইলে তিনি আর কোনো কথা বলেননি। এ বিষয়ে পর্যটকসহ স্থানীয়রা সবাই চুপ হয়ে যান।
এসময় নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মদতেই এসব ব্যবসা চলছে। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হলেও তাদের বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই।
অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন কর্মকাণ্ড ও পর্যটকদের অসচেতনতার কারণেই দিন দিন দূষিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ। স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে অস্থায়ী ডাস্টবিন বাড়াতে হবে। লাগাতে হবে সর্তকতামূলক ফেস্টুন। অথচ এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না বললেই চলে।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা জামশেদ বলেন, ‘আমরা রাঙ্গামাটিতে এসেছি কাপ্তাই হ্রদ দেখার জন্য। কিন্তু হ্রদে ঘুরতে গিয়ে দেখতে পেলাম, বিভিন্ন স্থানে পলিথিন ও বোতল ভেসে আছে। এতে করে হ্রদের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। আমি মনে করি, পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য রক্ষা ও হ্রদের দূষণ রোধে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।’
স্থানীয় বোট চালক ফয়সাল বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের পানিতে বোতল, পলিথিনসহ খাবারের খোসা ফেলতে নিষেধ করি। কিন্তু কার কথা কে শোনে?’
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন দুই-তিন জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে পর্যটকদের চলাফেরার স্থানগুলো পরিষ্কার করে আসছি। এছাড়া, কয়েকটি অস্থায়ী ডাস্টবিন করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকরা সেগুলো ব্যবহার না করে যেখানে-সেখানেই ময়লা ফেলছেন।’
সৃজন বিকাশ বড়ুয়া আরও বলেন, এখানকার অস্থায়ী ব্যবসায়ীদেরও এভাবে ব্যবসা না করতে অনেকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের কথা পাত্তাই দিচ্ছে না। আমরা গেলে উঠে যায়। কিন্তু আমাদের অনুপস্থিতিতে আবার এসে ব্যবসা শুরু করে। তাদের উঠে যেতে বলায় আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকিও দিয়েছে।
সারাবাংলা/জেএএম/টিআর