Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিপিসি-বিমানের দ্বন্দ্ব: সুরাহা হয়নি আট বছরেও


২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৪৬

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উড়োজাহাজের জ্বালানি ‘জেট ফুয়েল’ ক্রয় বাবদ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পাওনা নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিরোধ আট বছরেও মেটেনি। বিপিসি’র দাবি করা ২ হাজার কোটি টাকা পাওনাকে অযৌক্তিক বলছে বিমান। পদ্মা অয়েল কোম্পানি গত বছরের অক্টোবর থেকে বিমানের কাছে বাকিতে জেট ফুয়েল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আগের পাওনা নিয়ে বিরোধ মেটাতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এই অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত উভয় সংস্থাই বিরোধ মিমাংসার জন্য তাকিয়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিরোধ মিমাংসাকল্পে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।

জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মো. সরওয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমাদের দুই মন্ত্রণালয়ের হায়ার অথরিটি পর্যায়ে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে উভয় মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিবেদন তৈরি করছি। খুবই ইতিবাচকভাবে আমরা এগুচ্ছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটার ফয়সালা হয়ে যাবে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাকিল মেরাজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দাবি বেশি কিছু না। আমরা চাই দেশিয় বিমান পরিচালন ব্যবসার বিকাশের স্বার্থে আমাদের যৌক্তিক মূল্যে তেল দেওয়া হোক। কারণ উভয় সংস্থাই সরকারী সংস্থা। টাকাও যাবে সরকারের। আমরা শুধু যৌক্তিক মূল্যটা নির্ধারণ হোক, সেটাই চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটা আমরা মাথা পেতে নেব।’

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, ২০১০ সালে বকেয়া মূল্যে পদ্মা অয়েল থেকে জেট ফুয়েল কিনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু পরবর্তীতে সেই বকেয়া দাম আর সমন্বয় করেনি বিমান। এরপরও ২০১৮ সাল পর্যন্ত বকেয়া দামে জেট ফুয়েল কেনা অব্যাহত রাখে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর জেট ফুয়েলের টাকাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালের বকেয়া টাকা আর সমন্বয় করা হয়নি। সেই টাকা সুদে-আসলে ২০১৮ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায়।

২০১৬ সাল থেকে কয়েক দফা বিমানকে চিঠি দিয়েও সেটা আদায় করতে পারেনি বিপিসি। এর আগে ২০১৪ সালে বিপিসি বকেয়া পাওনার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে। বিমানের পক্ষ থেকেও চিঠি দিয়ে এই পাওনা নিয়ে আপত্তির কথা জানানো হয়।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর বিমানকে কড়া ভাষায় একটি চিঠি দেয় বিপিসি। এতে পাওনা পরিশোধ এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নগদ মূল্যে জেট ফুয়েল সংগ্রহে বিমানকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

বিষয়টি বিরোধের পর্যায়ে চলে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। ফেব্রুয়ারিতে আবারও বৈঠক হওয়ার কথা আছে বলে বিপিসি সূত্রে জানা গেছে।

তবে বিপিসি কর্মকর্তা মো.সরওয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, বিমান এখন নগদ মূল্যে জেট ফুয়েল নিচ্ছে। তবে আগের পাওনা টাকার কোন সমন্বয় হয়নি। আমরা আশাবাদী। সেই সমাধানও আশা করি হয়ে যাবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বিপিসি যে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা পাওনার কথা বলছে, বিমান মনে করে সেটা তাদের নিজস্ব দাবি। বিমানের হিসাবতে, এই পাওনার পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিপিসি জেট ফুয়েলের যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেটা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে ৮২ শতাংশ বেশি। আর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ বেশি। দেশে পদ্মা অয়েল একমাত্র জেট ফুয়েল বিক্রি করে। ভর্তুকি মেটাতে তারা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমানকে জবাই করবে কেন? আমরা আমাদের আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানিয়ে বলেছি, যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করলে আমরা অবশ্যই পাওনা পরিশোধ করব।’

বিপিসি কর্মকর্তা মো.সরওয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে। এটা নিয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাই না। সেখান থেকে যদি বলা হয়, পাওনা পুরোপুরি বুঝিয়ে দিতে, আশা করি বিমান পাওনা বুঝিয়ে দেবে। অথবা সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে, সেটাই আমরা মাথা পেতে নেব।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

বাংলাদেশ বিমান বিপিসি-বিমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর