Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১ বছরের জন্য বন্ধ শাহবাগের শিশু পার্ক, ফিরে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা


২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৫৪

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: শাহবাগের কেন্দ্রীয় শিশু পার্কে পাঁচ বছরের শিশু সন্তান রাইসাকে নিয়ে উত্তরা থেকে ঘুরতে আসেন আহসান-সাইমা দম্পতি। ঘুরতে এসে পার্ক বন্ধ দেখে ফিরে যাওয়ার সময় সন্তানকে নিয়ে পড়লেন বিপাকে। দোলনায় না চড়া পর্যন্ত সে বাসায় না যাওয়ার বায়না ধরেছে। তাই পার্কের গেইটের লোহার স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে দূর থেকে রং বেরংয়ের দোলনাসহ বিভিন্ন রাইডস চোখ দিয়ে বুলিয়ে নিচ্ছে সে। পেছন থেকে তার বাবা তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলেও কিছুতেই লোহার স্ট্যান্ড ছাড়ছে না সে।

বিজ্ঞাপন

রাইসার বাবা আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা ফার্মে চাকরি করি। আজকে ছুটি ছিল। তাই বাচ্চাটাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এলাম। কিন্তু এসে বন্ধ দেখে চলে যেতে চাইলে বাচ্চা ভেতরে না ঢুকে যাবেই না বলে গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর বলছে দোলনায় চড়বে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’

একই অবস্থা ময়মনমিংহের নেত্রকোনা থেকে দুই মেয়ে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার শাহজানপুরে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসা রফিকুল ইসলামের। আজকেই গ্রামে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে মেয়েরা শিশু পার্ক দেখতে বায়না ধরেছিল। তাই আজকে সপরিবারে ঘুরতে গেলেন শাহবাগের শিশু পার্কে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন পার্কটির মূল ফটকে তালা মারা। গেইটের পাশে বড় করে লেখা উন্নয়ন ও আধুনিকায়ণের জন্য পার্কটিতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ। কিন্তু পার্ক যে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ, অথচ জানতে পারেননি এতে তিনি চরম বিরক্ত প্রকাশ করলেন।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেত্রকোনা থেকে চারদিন আগে শাহাজাহানপুরে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। আজকে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে মেয়েরা শিশু পার্ক দেখতে আবদার করেছিল। তারা বইতে পড়েছে অথচ ঢাকায় এসেও দেখতে পারবে না এটা ভেবে নিয়ে আসলাম। কিন্তু এসে তো দেখি বন্ধ।’

বিজ্ঞাপন

তিনিও বললেন, ‘বন্ধ যে এ বিষয়টা জানেন না। অথচ কষ্ট কইরা ওদেরকে নিয়ে জ্যাম ঠেলে আসলাম। বহুজনকেও দেখলাম আমাদের মত ফিরে যেতে। এটা যে বন্ধ এ বিষয়টি ভালো করে প্রচার করা উচিত ছিল। কেউ তো জানে না। সবাই এসে ফিরে যাচ্ছে। সময়, টাকা সব কিছুই নষ্ট হচ্ছে বিষয়টি না জানার কারণে।’

শুধু রফিকুল ইসলাম কিংবা আহসান দম্পতি নয়, সন্তানদেরকে পার্কে ঘুরাতে এনে এমন বিপাকে পড়েছেন সদরঘাট থেকে আসা মুনির খান, বাড্ডা থেকে আসা রাশেদুল বারি, আজিমপুর থেকে আসা নোমান ছিদ্দিকি, কল্যাণপুর থেকে আসা শাহরিয়ারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় অর্ধশত পরিবার।

পার্ক বন্ধ থাকার বিষয়টি তারা না জানতে পেরে প্রত্যেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলের। শাহরিয়ার দম্পতি ফিরে যাওয়ার সময় আক্ষেপের সুরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পার্ক বন্ধ। বিষয়টি ভালো করে প্রচার না করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা তাদের উচিত হয়নি। বহুলোক কষ্ট করে এসে ফিরে যাচ্ছে।’

উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কারণে আগামী ১ বছরের জন্য বন্ধ থাকবে শাহবাগ কেন্দ্রীয় শিশু পার্ক। কিন্তু বন্ধের বিষয়টি জানেন না অধিকাংশ দর্শনার্থী। এতে শিশু সন্তানদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েছেন দর্শনার্থীরা।

নগরীর শিশু-কিশোরদের চিত্র বিনোদনের জন্য রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, এসো গাড়ি চড়ি, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, ফুলদানি আমেজ, ঝুলন্ত চেয়ার, লম্ফ ঝম্ফ, এফ-৬ জঙ্গিবিমান, রেলগাড়ি ও বিস্ময়চক্র, আর্চারি, বেবি সাইকেল ও স্কেটিং রাইডসহ মোট ১৪টি রাইড স্থাপন করা হয় শিশুপার্কে। তবে আর্চারি, বেবি সাইকেল ও স্কেটিং রাইড ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো বাদ দিয়ে বাকি এগারটি দিয়ে চলছিল শিশু পার্ক। কিন্তু এই বিনোদন কেন্দ্রটির সব রাইডই মেয়াদোত্তীর্ণ। ৩৯ বছর আগের এসব রাইডের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৯ বছর আগেই। তারপরও এতো বছর ঝুঁকি নিয়ে এসব রাইডে চড়েছিল শিশুরা। রাইডগুলোতে ওঠার পর আতঙ্কে থাকতেন অভিভাবকরা। বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করে এবছর পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পার্কটির আধুনিকায়নে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পার্ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে একীভূত করে দর্শনার্থী নির্ভর করা হবে। যাতে শিশু পার্কে ঘুরতে আসা শিশুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত গ্লাস টাওয়ারসহ যাবতীয় স্থাপনাগুলো সহজে দেখে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে পারে।

মূল প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর এবং শিশুপার্কের আধুনিকায়নের বাস্তবায়ন করবে ডিএসসিসি। এ জন্য সংস্থাটিকে মূল বাজেট ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা থেকে পার্কের একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য কনসালটেন্সি ফি বাবদ ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে পুরনো স্থাপনা অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে। বাকি ৭২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে পার্কে নতুন ১৩টি ইকুয়েপমেন্ট ও আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিং নির্মাণে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেট (এনডিই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এরইমধ্যে পার্কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে গেছে। পার্কে চলছে নতুন রাইড বসানোর কাজ। ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরনো রাইডগুলো। সেই সঙ্গে চলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিচে ভূ-গর্ভস্থ ৫০০টি গাড়ি রাখার পার্কিংয়ের কাজ। এ প্রকল্পে পার্ক ও উদ্যান মিলিয়ে কয়েকটি ফুড কোর্ট, দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হাঁটার পথ, দর্শনার্থীদের জন্য বসার স্থান, আন্ডারপাস, মসজিদসহ আনুষঙ্গিক আরও বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রকৌশলীরা।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে থাকা শিশু পার্কটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রথমে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রী এটিকে স্থানান্তর না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেন। তাছাড়া পার্কের রাইডগুলো পুরাতন হওয়ায় সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। এজন্য এটিকে আধুনিকায়ন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে একীভূত করতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে।

এ প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর-২০১৯ পর্যন্ত। পার্কে প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার দর্শনার্থী আসে। তাই সংস্কারের কারণে তারা যেন বিড়ম্বনায় না পড়েন সেজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোনো দর্শনার্থী বিপাকে পড়েন সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

শাহবাগ শিশু পার্ক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর