পুলিশ কাস্টডি থেকে ফেসবুক লাইভে কায়সার হামিদ!
২১ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:০৮ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:১৯
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পুলিশি হেফাজতে থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভে এসেছিলেন অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ। সেই লাইভে তিনি তুলে ধরেন তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য। এর পরপরই আদালতে হাজির করা হয় তাকে। যদিও পুলিশ বলছে, তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় এভাবে লাইভ করার সুযোগ নেই।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলায় এখন কারাগারে সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ। রোববার (২০ জানুয়ারি) রাতে তাকে গ্রেফতারের পর আজ সোমবার (২১ জানুয়ারি) তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে সোমবার দুপুর ১টায় ফেসবুকে লাইভে আসেন কায়সার হামিদ। পুলিশ কাস্টডি থেকে কিভাবে তিনি লাইভে এলেন— এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল্লাহ হেল বাকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ১১টা/১২টার দিকে কায়সার হামিদকে আদালতে পাঠানো হয়। ফেসবুকে লাইভের বিষয় আমাদের জানা নেই।’
ঢাকা মুখ্য মহানগর (সিএমএম) আদালতের গারদখানার এক কর্মকর্তা জানান, গারদখানায় ঢোকানোর আগে মোবাইল রেখে দেওয়া হয়। এখানে লাইভের প্রশ্নই আসে না।
তবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দুপুর ১টার দিকে কায়সার হামিদ লাইভে যান। তিন মিনিটের মতো তিনি ছিলেন লাইভে। এসময় কায়সার হামিদ বলেন, ‘নিজেও জানতাম না এমন একটা মামলা আছে। আসলে এটা আপসও করে নেওয়া হয়েছিল। তারপরও ২০১৪ সালের একটি মামলা পেন্ডিং ছিল। আমি যে কোম্পানিতে জব করতাম, সেই নিউওয়ে প্রোপার্টিতে চাকরি করা অবস্থায় কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি দেখে আমাকে হ্যারাস করা হয়েছে।’
কায়সার হামিদ বলেন, বড় মামলা না। একজনের একটা মামলা ৭ লাখ টাকার, আরেকজনেরটা ২২ লাখের। আমি কিছু বুঝলাম না— অল্প কিছু টাকার জন্য মিডিয়াতে ফলাও করে ছাপলো (সংবাদ)। এটাই অবাক হয়ে যাই, হাজার কোটি টাকা মানুষ নেয়। আমি জব করতাম কনসালট্যান্ট হিসেবে। জব করার সময় এই টাকাগুলো মিসইউজ করে কোম্পানি। তার দায় টোটালি আমার ঘাড়ের ওপর এসে পড়ে। কারণ কোম্পানির সবার মোবাইল বন্ধ এখন। কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। ২০১৪ সালের ঘটনা। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। এটা আমার জানা ছিল না।
এসময় নিজের অনুসারীদের অভয় দিয়ে কায়সার হামিদ বলেন, ‘কেউ চিন্তিত হবেন না। কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলাটা হয়েছে, সেটা আমার ঘাড়ে এসেছে পড়েছে।’
পুলিশ প্রধান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে একসময়ের জনপ্রিয় এই ফুটবলার বলেন, ‘মামলা দেয়ার সময় দেখা উচিত ছিল, আসলে আমি কী অবস্থায় ছিলাম বা কী করতাম। এগুলো দেখা উচিত ছিল। আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। অথচ কালার ফটোকপি দিয়ে মামলা করা হয়েছে। বাদীরা নিজেরাও বলেছেন, আমি জব করতাম।’
কায়সার হামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নিউওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। কোম্পানিটি পরে বন্ধ হয়ে গেলেও সেই টাকা গ্রাহকরা কেউ ফেরত পাননি।
উল্লেখ্য, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ বাংলাদেশে ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে স্বীকৃত। তিনি ‘মোহামেডানের কায়সার হামিদ’ নামেই পরিচিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের সদস্য কায়সার হামিদ ১৯৮৯ সালে ডাকসু নির্বাচনও করেছিলেন। গত শতকের ৯০ এর দশকের শুরুতে ফুটবল থেকে বিদায় নেওয়ার পর কায়সার হামিদ জাকের পার্টিতে যোগ দিয়েও আলোচনার জন্ম দেন। এই দলটির হয়ে সংসদ নির্বাচনে গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থীও হয়েছিলেন তিনি। কায়সার হামিদের মা রাণী হামিদ বাংলাদেশের কিংবদন্তি দাবাড়ু। তার বাবা প্রয়াত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল হামিদও ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন।
সারাবাংলা/জেএইচ/টিআর