প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ রোহিঙ্গা বাড়ি ফিরবে
১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:৩৭
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আগামী ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ থেকে তাদের বসত-ভিটায় ফেরত যেতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দিনের আলোতে বাংলাদেশ থেকে তাদের বাড়ি মিয়ানমারে পাঠানো হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করবে দুই দেশ।
বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীকে তাদের বসত-ভিটায় ফেরানোর পুরো কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকে মঙ্গলবার সকালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের নেপিডোতে দুইদিনব্যাপী বৈঠকটি গত সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শুরু হয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে শেষ হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াই জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ। এই জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ কাজটিকে আমরা সহজ ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। যাতে নির্যাতিত ও নিপীরিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় তাদের বসত-ভিটায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায়। দুই দেশ একটি ভারসাম্যমূলক প্রত্যাবাসন চুক্তি করতে পেরেছে। এখন আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে আর সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
নেপিডো থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো এক বার্তায় এই প্রত্যাবাসন সম্পর্কে বলা হয়, দুইদেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত নভেম্বরে করা চুক্তি অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দিনের আলোতে বাংলাদেশ থেকে তাদের বাড়ি মিয়ানমারে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশের ৫টি শিবির থেকে পাঠানো রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ২টি শিবিরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। রোহিঙ্গারা যাতে আর বাংলাদেশে পালিয়ে না আসে, এই বিষয়টিও নিশ্চিত করবে মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন দ্রুত শেষ করার জন্য সীমান্তের শূন্য জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন করা হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুর হক নেতৃত্ব দেন। অপরদিকে, পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ে মিয়ানমারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকটি মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) আবার অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে টানা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও অনেক বিষয়ের সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব হয়নি। ফলে মঙ্গলবার আবারও বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত প্রক্রিয়া নিয়ে সোমবারের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মিয়ানমারের ১২৪ একর জমির উপর ৬২৫টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে অস্থায়ীভাবে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়ে আশ্রয় দেওয়া হবে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমন আরও ১০০টি ভবন নির্মাণ শেষ হবে। ওইসব ভবনেও ফেরত নেওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হবে।
নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমাঝোতা স্মারক সই করা হয়। সমাঝোতা স্মারক অনুযায়ী, সামনের ২৩ জানুয়ারির মধ্যে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এ ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অবহিত করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
সারাবাংলা/জেআইএল/আইজেকে