রেইনট্রিতে ধর্ষণ: সাক্ষ্যগ্রহণ ফের পেছাল
২২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:০১
।।স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় এক আসামির আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুর আগেই ধর্ষণের শিকার এক শিক্ষার্থী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উপস্থিত হন। এদিন এ সাক্ষীকে আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিমের পক্ষে জেরা করার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তখন ওই আসামির আইনজীবী এবিএম খায়রুল ইসলাম লিটন ট্রাইব্যুনালে অনুপস্থিত। তখন ওই আইনজীবীকে প্রসিকিউটর ফোন দিয়ে জানতে পারেন তিনি মামলা ছেড়ে দিয়েছেন। তখন আসামি নাঈম আশরাফ মৌখিকভাবে সময় আবেদন করলে ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ ঠিক করেন।
ওই সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ও বিশেষ পিপি মো. লিয়াকত আলী এবং ভিকটিমের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বিচারককে বলেন, গত ধার্য তারিখে দাখিল করা আসামি সাফাতের জামিন বাতিলের একটি আবেদন ছিল। অন্যদিকে ওই আসামির আইনজীবী মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা জামিন স্থায়ীর আবেদন করেন। ওই সময় বিচারক বলেন, তিনি দেখে আদেশ দিবেন।
শুনানিকালে জামিনে থাকা আসামি আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিব, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামি নাঈম আশরাফকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদিকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসা ভিকটিম ও তার মা বেড়িয়ে যাওয়ার সময় এই প্রতিবেদককে বলেন, সাক্ষ্য দিতে এ নিয়ে ৫ দিন তার মেয়েকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসলেন। দুইদিন সাক্ষ্য হয়নি। এভাবে বার বার তারা ট্রাইব্যুনালে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এমনিতেই এক এক করে আসামিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। হাতে জীবন নিয়ে আদালতে আসেন। আর যে আসামি কারাগারে রয়েছেন তিনি জামিন পলে তাদের জীবন আরও সংশয়ে পড়বেন। মেয়ে নতুন একটি জবে ঢুকেছেন। তিনি নিজেও ঢাকার বাইরে চাকুরি করেন। এভাবে মাসে ৩/৪ বার তাদের পক্ষে কিভাবে ট্রাইব্যুনালে আসা সম্ভব।
উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের জামিন মঞ্জুর করে একই বিচারক। এর আগে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের সহযোগী অপর আসামিরা জামিন পেয়েছেন।
২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জগঠন করেন।
মামলাটিতে ওই বছর ৭ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়, আসামিদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ধর্ষণের শিকার ওই দুই শিক্ষার্থীর বন্ধু। গত ২৮ মার্চ ঘটনার দিন আসামি সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের যান ওই দুই ছাত্রী। এরপর ওইদিন তাদের রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা আটকে রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। আসামী সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ একাধিকবার তাদের ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ করার সময় আসামি সাফাত গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে বাসায় দেহরক্ষী পাঠিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখান। ভুক্তভোগীরা ভয়ে মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে মামলার সিদ্ধান্ত নেন।
সারাবাংলা/এআই/এমএইচ