Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫০ মামলায় জামিন, নজরদারিতে থাকবেন জামায়াত নেতা শাহজাহান


২২ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:১৫

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় ৫০টি মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী সংগঠন জামায়াত ইসলামীর চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রক খ্যাত শাহজাহান চৌধুরী কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। তবে নাশকতা কার্যক্রমে জড়িত থাকায় তাকে নজরদারির আওতায় রাখা হবে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় তিনি মুক্তি পেয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মুক্তির সময় কারাফটকের সামনে জামায়াত-শিবিরের তেমন কেউ ছিলেন না। তাকে প্রথমে একটি প্রাইভেট কারে আন্দরকিল্লায় শাহী জামে মসজিদ মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর শাহজাহানকে নিয়ে প্রাইভেট কারটি নগরীর দেওয়ান বাজার হয়ে চন্দনপুরার দিকে চলে যায়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, সব মামলায় জামিনের আদেশ আসার পর আমরা শাহজাহান চৌধুরীকে মুক্তি দিয়েছি। এর আগে আমরা আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। নতুন করে কোনো মামলা আছে কি না বা গ্রেফতার দেখানো হয়েছে কি না- তাও আমরা খতিয়ে দেখেছি।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৫০টির মতো মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নাশকতার মামলা। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় তিনি জজ আদালত থেকে এবং অধিকাংশ মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ থেকে জামিন পেয়েছেন।

সূত্র জানায়, শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির। চট্টগ্রামে জামায়াতের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে মহানগর শাখার সাবেক আমির আ ন ম শামসুল ইসলামেরও। দু’জনই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং দু’জনের অবস্থান পরস্পরের বিপরীতে।

বিজ্ঞাপন

শাহজাহান চৌধুরী জামিনে কারামুক্ত হলেও আ ন ম শামসুল ইসলাম কারাগারে আছেন, জানিয়েছেন জেল সুপার কামাল হোসেন।

গত বছরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসায় সংগঠনের গোপন বৈঠক থেকে শাহজাহান চৌধুরীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা ‍পুলিশ। আর ২৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি নাশকতার মামলায় আত্মসমর্পণের পর আ ন ম শামসুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দু’বার সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হন তিনি। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরী মনোনয়ন পাননি। সেই নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামসুল ইসলাম। তখন থেকেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

সেই দ্বন্দ্বের জেরে দুই নেতা চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি থেকে তাদের পদ হারান। যদিও তারা দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে জামায়াতের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেন। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণও শাহাজান চৌধুরীর হাতে। এর আগে তিনি সহিংস ও সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির জন্য সমালোচিত হয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা শাহজাহান চৌধুরী নব্বই দশকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় এবং মহানগরে বিশাল ক্যাডারবাহিনী গড়ে তোলেন। সেই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত কমপক্ষে ৩০ জনকে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার শুরুর পর ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শাহজাহান চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জুড়ে একটানা নাশকতা চলে বলে তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) মো. আব্দুল ওয়ারিশ খান সারাবাংলাকে বলেন, প্রায় সব মামলাতেই তিনি জামিন পেয়েছেন। তবে যেহেতু এই জামায়াত নেতা অতীতে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাকে আমরা নজরদারিতে রাখব।

বিজ্ঞাপন

এদিকে অনেকটা নিরবে জোটের শরিক দল জামায়াতের নেতা শাহজাহান চৌধুরী বের হয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, “ভোটের আগে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার আমাদের শত শত নেতা-কর্মী এখনও জেলে আছেন। জামিন পাচ্ছেন না। অনেকে আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। আজকেও (মঙ্গলবার) ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মহিলা দলের একজন নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে যাচ্ছেন, বিষয়টা রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে।”

সারাবাংলা/আরডি/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর