ক্ষেতলালে ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার চিকিৎসা
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:০৩
।। ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট ।।
জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি জনবল। ফলে চিকিৎসক ও জনবলের সংকট নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। সেবাগ্রহীতারাও এ কারণে ভুগছেন চিকিৎসা নিতে এসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০১১ সালে। জনবল কাঠামো অনুযায়ী, এখানে ২৫ জন চিকিৎসসহ ১৫ জন অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং ৩১ শয্যার কাঠামোতে যে জনবল ছিল, তাতেই রয়েছে ঘাটতি। মোট ৫৩ জনের চাহিদার বিপরীতে এখানে কাজ করছেন মাত্র ২২ জন। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে দাফতরিক কার্যক্রমও চলছে খুঁড়িয়ে।
জানা গেছে, এলাকার জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র ও সিনিয়রসহ পাঁচ জন কনসালট্যান্ট থাকার কথা। কিন্তু সেখানে কাজ করছেন মাত্র দুই জন। এছাড়া চার জন চিকিৎসকের পদে দু’জন, অফিস সহায়ক চার জনের বিপরীতে একজন, ক্লিনার পদে পাঁচ জনের বিপরীতে দু’জন ও নিরাপত্তা প্রহরী দু’জনের বিপরীতে কাজ করছেন একজন। ফলে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৫৩ জনের পদের বিপরীতে ৩১টি পদই এখনও শূন্য রয়েছে।
এদিকে, অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিকে অবস্থান না করে নিজ বাসা-বাড়ি ও জেলা সদর থেকে এসে অফিস করারও অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী একরামুল ইসলাম বলেন, জোহরের আজানের পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। সময়মতো ডাক্তার না থাকায় অনেককেই বিপদে পড়তে হয়। জরুরি বিভাগে রোগী নিয়ে এলে তাদের চিকিৎসা না দিয়ে অন্য কোথায় পাঠিয়ে দেন তারা।
ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছমা খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, এখানে রোগীদের রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন প্রায় তিন বছর ধরে বিকল হয়ে আছে। এরই মধ্যে বিকল এক্সরে মেশিন পুরোপুরি অকেজো ঘোষণা করা হয়েছে। একটি দাতা সংস্থার দেওয়া একটি এক্সরে মেশিন দিয়ে যতটা সম্ভব সেবা দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ না দেওয়ায় পাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে জরুরিভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সে সুযোগও বন্ধ হয়েছে। উপজেলার তুলশিগংঙ্গা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডা. নবনিতা পাল ও বড়তারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডা. ইসমাঈল হোসেনকে এনে এখন এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নবনিতা পাল সারাবাংলাকে বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় তুলশিগংঙ্গা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আমাকে এনে এখানকার ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে রোগীদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য কাজকর্মে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কয়েক বছর ধরে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট চলছে। এ সংকট নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এলাকার রোগীদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেবল জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতিও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
ডা. মামুনুর রশিদ আরও বলেন, বর্তমান অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় সিজারসহ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশানের রোগীকে অন্যত্র চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসক ও জনবল সংকট দূর হলে এবং সব যন্ত্রপাতি সচল হলে আমরা সবার জন্য সেবা নিশ্চিত করতে পারব।
সারাবাংলা/টিআর