তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের যত উদ্যোগ
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:১৬
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকার আদালতে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে শরণার্থীর মর্যাদা নিয়ে লন্ডনে বাস করছেন। দণ্ডাদশেরপ্রাপ্ত এই আসামিসহ বিদেশে পালিয়ে থাকা সব অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার।
ঢাকার কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় অনুযায়ী সাজা দিতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রত্যর্পণ (এক্সট্রাডিশন অ্যাক্ট) চুক্তি থাকতে হবে, যা এখনো হয়নি। ঢাকার সঙ্গে এই চুক্তি করতে লন্ডনকে গত বছর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, আরও সময় লাগবে বলেও তারা জানান।
ঢাকার কূটনীতিকরা জানান, বিগত ২০১৫ সালে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকার হাইকমিশনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি যুক্তরাজ্য সরকার।
ঢাকা ও লন্ডনের কূটনীতিকরা বলছেন, বিষয়টি এত সহজ নয়, চিঠি দিলেই তো সবকিছু হয় না। তারেক রহমানের বিষয়টি স্পর্শকাতর, এই বিষয়ের সাফল্য ঘরে তুলতে হলে নিয়মিত কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। অথচ ঢাকা চিঠি দিয়েই খালাস, কার্যকর তৎপরতা চালায়নি।
তারা আরও বলছেন, একই সময়ে তারেক রহমানকে ফেরাতে ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ২০১৫ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ইন্টারপোলে তারেকের বিরুদ্ধে মোস্ট ওয়ারেন্ট নোটিশও ঝুলেছিল। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তারেক রহমানের আইনজীবীরা এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি তৎপরতা চালালেও ঢাকার পক্ষ থেকে তখন শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে ২০১৬ সালের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইন্টারপোল তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকা থেকে তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।
সব ধরনের কূটনৈতিক ‘ব্যর্থতার’ পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারেক রহমানকে ফেরত আনার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগ নেন। ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঝটিকা সফরে ঢাকা এলে বরিস জনসনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: তারেক রহমানসহ পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, এসব বিষয়ে কঠোরভাবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যুক্তরাজ্য সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন, তিনি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ রাখছেন।
সারাবাংলা’র এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারেক রহমানসহ যত আসামি রয়েছেন, তাদের সবাইকে ফেরত আনা হবে। আমরা তাদের ফেরত এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে চাই। আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করবো।’
২০০৮ সালে ওই সময়ের সেনা নিয়ন্ত্রিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে তারেক রহমান কারাগার থেকে জামিন পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। ওই সময়ে তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েও লন্ডন যান।
এরপর উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২২ জুলাই মুদ্রা পাচার মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এরপর চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এদিকে, হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষের বিষয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া বিচারাধীন রয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২টি মামলা।
এরবাইরে ঢাকার বাইরের আদালতে কমপক্ষে ১০০ মামলা রয়েছে রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এই মামলাগুলোর বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে দায়ের করা।
এই প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ ৮টি মামলা চলছে। আর ২টি মামলায় তার সাজা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/ এমএনএইচ