মাঘের হিম মেখে রাজধানীতে পিঠা উৎসব
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:৪৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বাংলার শীত মানেই হিম ঠান্ডা, কুয়াশা, শুষ্ক দিন আর মিষ্টি পিঠা। হেমন্তের শেষে যখন নতুন ফসল ঘরে উঠে তার পরেই ধুপ ধাপ পাড় পড়া শুরু করে ঢেঁকিতে। ওদিকে বাড়ি বাড়িতে খেজুর গাছে রসের কলসি। রস জ্বাল দিয়ে ঘন করা হচ্ছে, সেই সুঘ্রাণ কুয়াশায় ভর করে ভেসে যাচ্ছে দূর থেকে দূরান্তে।
আজ যারা শহরের বাসিন্দা তাদের প্রায় প্রত্যেকের স্মৃতিতে আছে এমন মিষ্টি গন্ধের এক শৈশব। সে শৈশবের টানেই কি-না, রাজধানী ঢাকাতেও বসেছে পিঠা উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির মাঠে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় পিঠা উৎসব আয়োজন পরিষদ আয়োজন করেছে ১০ দিনব্যাপী পিঠা উৎসব।
আয়োজকদের দাবি এবারের পিঠা উৎসব বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা প্রদর্শনী ও বিক্রির মহাউৎসব। সত্যিই তাই তাই। যেদিকেই চোখ যায় দেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলার নামে এক একটা স্টল, আছে বরিশাল, নোয়াখালী, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার স্টল। আছে খুলনা, কিশোরগঞ্জ, মুক্তাগাছার স্টলও। এমনকি ঢাকার দোহার বা খোদ ঢাকাইয়াদের পিঠার দোকানও আছে। প্রতিটি জেলার মানুষ উৎসবে এসেছে নিজ নিজ জেলার পিঠার বৈচিত্র নিয়ে।
দোকানীরা চেষ্টা করেছেন নিজেদের সর্বোচ্চ নৈপূণ্য পিঠার মাধ্যমে তুলে ধরতে। বাদ পড়েনি স্টল সাজানোতেও। কাগজ, বেলুন, রঙিন ফুল যার যা দক্ষতা তাই দিয়ে সাজিয়েছেন স্টলগুলোকে।
শিল্পকলার মাঠজুড়ে তখন মৌ মৌ করছে পিঠার গন্ধ। পাকন পিঠা, পুলি পিঠা, নকশি পিঠা, গজা, খেজুর পিঠা, লবঙ্গলতিকা, চিতই পিঠা, রস মঞ্জুরি, পাটিসাপটা, রস কদম, গোলাপ পিঠা… কত কত তাদের নাম! প্রায় প্রতিটি স্টলের একপাশেই বসেছে এক বা একাধিক চুলা।
চুলায় জ্বাল দেওয়া হচ্ছে রস, দুধ আর বানানো হচ্ছে গরম গরম পিঠা। আবার কোনো দোকানে গরম গরম বানানো হচ্ছে পিঠা।
বিকেলের দিকে অফিস ফিরতে মানুষ ঢু মেরে যাচ্ছেন পিঠা উৎসবে। প্রত্যেকেই ঢুকে প্রথমে ছুটে যান নিজ নিজ জেলার স্টলে আবার অন্য জেলার পিঠাও চেখে দেখতে ভুলছেন না। তাদের একজন ইসমত। সারাবাংলাকে বললেন, এই বছরই প্রথম আসলাম পিঠা উৎসবে। খাবো কী, দেখেই কূল পাচ্ছি না। এত ধরণের পিঠা আছে তাই তো জানতাম না।
নগরবাসীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ঝাল পিঠাও। সাভাবিক ঝাল পিঠা কুসুম কলি, ডিম সুন্দরী ইত্যাদি তো আছেই, পাটি সাপটা বা ভাপা পিঠার মধ্যেও ভরে দেওয়া হচ্ছে ঝাল পুর। তা নিয়েই খুশি অনেকে। একজন দর্শনার্থী বলেন, পিঠার এই বিবর্তন উপভোগ করছি। ঝাল মিষ্টি মিলিয়ে বেশ একটা স্বাদ বদল হচ্ছে।
নিজ নিজ জেলার পিঠার বৈশিষ্ট্য নিয়ে যারা এসেছেন তারা অনেকেই এখন নগরবাসী। তবে পরম মমতায় পিঠার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজ জেলার ঐতিহ্যকে। তাদের অনেকেই পেশায় গৃহিণী তবে ঘরে বসেই পিঠা বানিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। এভাবেই পিঠাকে পুঁজি করে তারা সাধারণ গৃহিণী থেকে হয়ে উঠছেন অসাধারণ উদ্যোক্তা।
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) শুরু হওয়া এই মেলা চলবে আগামী এক ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত।
সারাবাংলা/এমএ/এমআই