চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন প্রকল্প
২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিলেও এবার নেওয়া হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিস্কাশন উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প। এরইমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে রিটেইনিং ওয়াল ও ফ্লাড ওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ার বন্যা থেকে চট্টগ্রাম শহর রক্ষা এবং রেগুলেটর নির্মাণ ও পাম্প হাউস স্থাপনের মাধ্যমে শহর এলাকায় লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ রোধ ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বুধবার সারাবাংলাকে জানান,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ সমাপ্ত করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরের পূর্বদিকে কর্ণফুলী নদী এবং উত্তর দিকে হালদা নদী অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী মূল শিল্প এলাকা মূলত সমুদ্র বন্দর, পাহাড়তলীস্থ রেলওয়ে এলাকা, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর, কালুরঘাট ভারি শিল্প এলাকা নিয়ে গঠিত। কর্ণফুলী ও হালদা নদী দুটি চট্টগ্রাম মহানগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২৩টি প্রাইমারি খালের প্রবাহ কর্ণফুলীতে ও ৩টি খালের প্রবাহ হালদা নদীতে এবং ১৪টি খালের প্রবাহ বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পানি নিষ্কাশন সমস্যার মূল কারণ হলো বৃষ্টির পানি ও কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত জোয়ার ভাটার যৌথ প্রভাব, যা শহরের জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর ডান তীরে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় উচুঁ জোয়ারের প্রভাবে কর্ণফুলী নদীর পানি নগরীতে প্রবেশ করে।
এছাড়া সামুদ্রিক ঝড়, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে পানির উচ্চতা হঠাৎ ও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। অধিকাংশ খালের পানি ধারণ ক্ষমতা কম, গৃহস্থালি ও শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য এবং পর্যাপ্ত নিষ্কাশন সুবিধা না থাকার কারণে ভরা জোয়ার ও ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পানিসম্পদমন্ত্রীর কাছে ডিও (আধা সরকারি পত্র) লেটার পাঠান। সে জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসা একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৬৯টি পাম্প সরবরাহ ও স্থাপন, ৭টি জেনারেটর সরবরাহ ও স্থাপন, ২৩টি রেগুলেটর এবং ৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান একনেকের জন্য তৈরি করা প্রকল্পের সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহর এলাকায় লবণাত পানির প্রবেশ রোধসহ চট্টগ্রাম মহানগরীকে জোয়ারের পানি বন্যা থেকে রক্ষা করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/জেজে/একে