বাঘাইছড়িতে চাপা আতঙ্ক, পাহাড়িদের বাজার বর্জন
২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৫
।। প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
রাঙ্গামাটি: জনসংহতি সমিতি সমিতির (এমএন লারমা) একজন কর্মী হত্যাকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আতঙ্ক এখনো কাটেনি। যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে। সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ডাকে চলছে বাজার বর্জন।
বাঘাইছড়ি উপজেলার স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির বাবুপাড়ায় স্থানীয় প্রভাত কুসুম চাকমার বাড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমিতির (এমএন লারমা) কর্মী বসু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পর দিন প্রভাত কুসুম চাকমা বাদী হয়ে সন্তু লারমা নেতৃত্বধীন উপজেলা জেএসএস সভাপতি প্রভাত কুমার চাকমা, উপজেলা জেএসএস সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা, সহ-সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা, বাঘাইছড়ি পৌর কাউন্সিলর পলকসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) বাঘাইছড়ি উপজেলার নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঘোষিত কর্মসূচির আওতায় এরই মধ্যে (১৬ ও ১৭ জানুয়ারি) ৪৮ ঘণ্টার সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধ কর্মসূচির পর এখন চলছে বাজার বর্জন কর্মসূচি।
স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এই ঘটনায় যেসব কর্মসূচি নিয়েছে তাতে পাহাড়ের মানুষ-জন আতঙ্কে রয়েছে। কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) দাবি করছে, তাদের দলের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে। এ জন্য পাহাড়ি এলাকায়-এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সাধারণ পাহাড়িরা বাজার বয়কট করেছে।
স্থানীয় বাজারের দোকানিরা বলছেন, জেএসএসের ভয়ে বাজারে আসছেন না সাধারণ মানুষ। এতে করে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কমে গেছে। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসায় ভাটা পড়বে।
পাহাড়িদের বাজার বর্জনের কারণেই ব্যবসায় ভাটা পড়েছে এমন কথা উল্লেখ করে মারিশ্যা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘জেএসসের বাজার বর্জনের ফলে সারাদিন কোনো কেনা-বেচা নেই। আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছি। গত শনিবার হাটাবাজারেও বাজারে তেমন পাহাড়ি ক্রেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। সাধারণ পাহাড়িরা জেএসএসের ভয়ে বাজারে আসছে না; এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় ভাটা পড়বে। তাই আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।’
মারিশ্যা বাজার চৌমুনী মার্কেট পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী আবুল কাইয়ুম বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি একে-অপরের ওপর নির্ভরশীল। জেএসসের বাজার বর্জনের ফলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বসু চাকমা হত্যা মামলায় জেএসএসের নেতাকর্মীদের নামে যে মামলা হয়েছে, তা আঞ্চলিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। সে মামলাকে কেন্দ্র করে বাজার বর্জন করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের দিকে এগিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি। আমরা অবিলম্বে এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে উপজেলা জেএসএসের সহ-সাধারণ সম্পাদক ত্রিদীপ চাকমা বলেন, ‘আমাদের নামে মামলা প্রত্যাহার না হলে বাঘাইছড়ি উপজেলায় সকল বাজার পাহাড়িদের বর্জন অব্যাহত থাকবে। বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এখন ভয়ভীতিতে আছে। বাজার বর্জন প্রত্যাহার করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা ও সাধারণ জনগণের চাপের কারণে আমরা এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা আজ আত্মগোপনে আছেন। সাধারণ মানুষও ভয়ে, আতঙ্কে আছেন। এরমধ্যে জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে। সেজন্য আমরা বাধ্য হয়েছি এমন কর্মসূচি দেওয়ার জন্য।’
এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) এম এ মনজুর জানিয়েছেন, ‘এলাকার সার্বিক পরিস্থতি ভালো আছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএইচ