ঘোষণাতেই ঝুলছে ঐক্যফ্রন্ট-বিএনপির নির্বাচনি মামলা
২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:৫৬
।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি। কিন্তু বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশের পর ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও দায়ের হয়নি নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে।
নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করবেন। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে ৩০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে হবে। আপিল ট্রাইব্যুনাল চার মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করবেন। আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৬৪ জেলায় স্থাপিত নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ও নির্বাচন আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সুযোগ থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে।
আরও পড়ুন : বিরোধী দলের নির্বাচিতদের সংসদে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের পর ১ জানুয়ারি নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সেই হিসাবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত-‘সংক্ষুব্ধ’ প্রার্থীরা। আর এ মামলাগুলো করতে হবে ব্যক্তিগতভাবে। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আলাদা মামলা করবেন।
কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর বেঁধে দেওয়া ৩০ দিনের মধ্যে ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলা হয়েছে— এমন খবর শোনা যায়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী ও শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তারা কোনো মামলা করেননি। এমনকি মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি।
অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল শুরু থেকেই। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে তারা স্মারকলিপিও দেয়। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নতুন নির্বাচন আদায়ে বিদেশি কূটনীতিকদের শরণান্নও হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি। কিন্তু তাদের এই দৌড়-ঝাঁপের মধ্যেই একের পর এক বিদেশি রাষ্ট্র অভিনন্দন জানায় নতুন সরকারকে।
এমন পরিস্থিতিতে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও ফল বদলে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ এনে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি। ওই সময় বলা হয়, মামলার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে জোটের শীর্ষ নেতারা শিগগিরই বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন : নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে যাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
নির্বাচনের তিন দিন পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে নির্বাচন সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, পরামর্শ, মূল্যায়ন ও অভিমত নেওয়া হয়। তাদেরও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ১২ জানুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক গণফোরামের বর্ধিত সভা শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলার দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। কেন্দ্রভিত্তিক ফল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ওই তালিকা পেলেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন বলেও জানানো হয়।
কিন্তু এরপর আরও ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেননি। এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতেও তাদের দেখা যায়নি।
মামলার সর্বশেষ খবর জানতে চাইলে ঢাকা-৭ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোস্তফা মোহসীন মন্টু শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখন এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলব না।’
ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬ টায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘যার যার মামলা তার তার করার কথা। এখন পর্যন্ত আমি মামলা করিনি। অন্য কেউ করেছে বলেও আমার জানা নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নির্বাচনের পর দ্রুত নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কথা বললেও মামলার সম্ভব্য ফল বা পরিণতি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। এছাড়া ২৯১টি আসনের (২৯৯ আসনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৮টি আসনে জয় পেয়েছে) প্রার্থীদের এই স্বল্প সময়ের মধ্যে এক জায়গায় এনে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা সহজ হবে না বলেও মনে করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে পর দেশের রাজনীতিতে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে: মওদুদ
ফলে মামলা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করছেন না তারা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মামলা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
আইনজীবীদের বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
আপনারা মামলা করেছেন কি না?—সারাবাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে বরিশাল-৩ ও নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, ‘দল সিদ্ধান্ত না নিলে আমরা মামলা করব কীভাবে?’ দলীয় সিদ্ধান্তের আগে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই বলেও তারা জানান।
সারাবাংলা/এজেড/এমএনএইচ
একাদশ জাতীয় নির্বাচন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনি মামলা বিএনপি