উপজেলা নির্বাচনে কোনো দলকে আনতে উদ্যোগ নেবে না ইসি
২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৩১
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো দল বা জোটঅংশ গ্রহণ না করলে তাদের নির্বাচনে আনতে কোনো উদ্যোগ নেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মে মাসের মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করতে কমিশনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উপজেলা নির্বাচন করবে। কোনো দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা সেই দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। একাধিক নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম শনিবার (২৬ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নেয় নির্বাচন করার জন্য। নির্বাচনে অংশ নেওয়াই তাদের কাজ। এখন কোনো কারণে কোনো দল বা জোট অংশ না নিলে কমিশনের কিছু করার নেই।’
এই ইসি কমিশনার আরও বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট অংশ না নিলে তাদের নির্বাচনে আনতে কমিশন কোনো উদ্যোগ নেবে না। কারণ এটা কমিশনের কাজ নয়।’
অন্যদিকে, মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মে মাসের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন করতে কমিশনের আইনি বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। ফলে কমিশন যথাসময়ে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কে নির্বাচনে আসবে, কে আসবে না, তা দেখার দায়িত্ব কমিশনের নয়। কমিশন আইন অনুযাযী সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য।’
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি
আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে দলটি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গত ২৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। ফলে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন, অগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ নির্বাচন এবং বেশ কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না দলটি।
মার্চ মাসে চারধাপের উপজেলা নির্বাচন
আগামী মার্চ মাস থেকে পাঁচ ধাপে ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৮০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে মার্চ মাসে চার ধাপে ৪৬৪টি উপজেলার নির্বাচন হবে। বাকি ১৬টি উপজেলার নির্বাচন হবে রমজান মানের পর। মার্চে অনুষ্ঠিত চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে প্রথম ধাপে নির্বাচন হবে আগামী ৮ অথবা ৯ মার্চের যেকোনো একদিন। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হবে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে নির্বাচন হবে ২৪ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে আগামী ৩১ মার্চ। তবে পঞ্চম ধাপের নির্বাচন হবে রমজান মাসের পর। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। এবারের উপজলো পরষিদ নির্বাচনে সব সদর উপজলোর সব কেন্দ্রে ইলকেট্রনকি ভোটিং মেশিনে (ইভএিম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
কোন ধাপে কোন উপজেলার নির্বাচন
কোন ধাপে কোন উপজেলার নির্বাচন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রথম ধাপে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ৫০ ভাগ জেলার সব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একইসময়ে যে সব উপজেলার মেয়াদ আগামী ২১ মার্চের মধ্যে শেষ হচ্ছে সেসব উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হবে। এছাড়া, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশ গ্রহণসহ বিভিন্ন কারণে ৩২জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। এই ৩২ উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হবে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৫০ ভাগ জেলার সব উপজেলায় ভোট নেয়া হবে। একইসঙ্গে যেসব উপজেলার মেয়াদ ২৬ মার্চ শেষে হবে সে সব উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হবে।
আর তৃতীয় ধাপে হবে খুলনা, রংপুর, রজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাকি সব জেলায়। এছাড়া যে সব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ ৩০ মার্চ শেষ হবে সেসব উপজেলায় তৃতীয় ধাপে নির্বাচন হবে।
আর চতুর্থ ধাপে বরিশাল, ঢাকা বিভাগের সব উপজেলায় ও চট্টগ্রাম বিভাগের বাকি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, যে সব উপজেলার মেয়াদ ১৯ জুনের মধ্যে শেষ হবে সে সব উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণ করা হবে। রমজানের পর পঞ্চম ধাপে বাকি উপজেলায় ভোট হবে ।
দেশে উপজেলা পরিষদের সংখ্যা
১৯৮৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়। উপজেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার সময় দেশে উপজেলার সংখ্যা ছিল ৪৬০টি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত উপজেলার সংখ্যা একই ছিল । অর্থ্যাৎ ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও উপজেলার সংখ্যা ছিল ৪৬০টি । পরবর্তী সময়ে দেশে উপজেলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ৪৮১টি উপজেলায়।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ৪৮২টি উপজেলায়। আর আগামী মার্চ মাস থেকে সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৮০টিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদের আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আর উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় পরিষদের প্রথম বৈঠক থেকে। এর আগে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত দিনে।
সারাবাংলা/জিএস/এমএনএইচ