৬৯ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেনযাত্রার স্বপ্ন দেখালেন রেলমন্ত্রী
২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:১৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ‘হাইস্পিড ট্রেন’ চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘হাইস্পিড ট্রেন চালু হলে বিরতি দিয়ে ৬৯ মিনিটে এবং বিরতিহীনভাবে ৫৭ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে।’ রোববার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দফতর সিআরবিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব পরিকল্পনার কথা জানান।
এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের রেল যোগাযোগ স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে বলেও জানান রেলেমন্ত্রী।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক স্টাডি রিপোর্ট আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে উনারা দেখিয়েছেন যে, এই ট্রেন চালু হলে বিরতি দিয়ে ৬৯ মিনিটে অর্থাৎ এক ঘণ্টা নয় মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসা যাবে। আর বিরতি না দিলে ৫৭ মিনিটে পৌঁছানো যাবে। এটার জন্য আলাদা লাইন তৈরি করতে হবে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী হয়ে এই ট্রেন সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে।’
দোহাজারি-ঘুমধুম রেললাইন স্থাপন প্রকল্পের বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যদি রেললাইন হয়, তাহলে ভবিষ্যতে চীন, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গেও যুক্ত হবে। সেই চিন্তাও আমাদের মাথায় আছে।’
রেলমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সমস্ত জেলা এর সঙ্গে যুক্ত হবে। আখাউড়া দিয়ে আগরতলা হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে রেলের সংযোগ হচ্ছে। পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধের পর ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগের যে জায়গাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
কর্ণফুলী নদীর ওপর বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু নির্মাণের অগ্রগতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর জন্য সংসদ সদস্য বাদল সাহেব (মঈনউদ্দিন খান বাদল) কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বারবার সংসদে এটা বলেছেন। একনেকে এটা উঠেছিল। কিন্তু কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এটা আটকে গেছে। এই সমস্যা আমরা দূর করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন। যেদিন রেল মন্ত্রণালয়ে আসবেন, সেদিন এটা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করব। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নিয়ে কাজ করব।’
টেন্ডারবাজি বন্ধে পদক্ষেপ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে থেকেই কাউকে খারাপ বলতে চাই না। কাউকে আগে থেকেই ভালোও বলতে চাই না। কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। কিন্তু কেউ যদি ভালো কাজে বাধা হয়ে আসে, আমরা সেটা অপসারণ করব। যে আমার ভালো কাজে সহযোগিতা করবে, সে আমার বন্ধু হবে। যে আমার কাজে বাধা হবে, সে যতই শক্তিশালী হোক, দেখা যাবে।’
রেলের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে রেল মন্ত্রণালয়কে আলাদা করা হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে রেলকে গতি দেওয়ার জন্য এবং, রেলকে সাধারণ মানুষের বাহনে পরিণত করে আগের অবস্থায় নিয়ে যাবার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে উন্নয়নের পরিকল্পনা, এর আওতায় রেল মন্ত্রণালয়েও অনেকগুলো অগ্রাধিকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দ ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রত্যেকটি জেলায় রেলকে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
‘রেলের ঐতিহ্য অবশ্যই ফিরে আসবে। এখন আন্তরিকতা, সততা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। আমাদের আরও বেশি শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে। কত কম সময়ে ও সাশ্রয়ে কাজগুলো করা যাবে, সেই চিন্তা করতে হবে।’ বলেন মন্ত্রী।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় রেলের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম ও পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদও বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই