Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উদ্বোধনের ৩ মাসেও শুরু হয়নি বার্ন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম


২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৩৯

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত বছরের ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই বার্ন ইনস্টিটিউটটি। সরকারের ওই মেয়াদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম একাধিকবার জানিয়েছিলেন, উদ্বোধনের আগেই সেপ্টেম্বর থেকে চালু হবে এই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। এরপর সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরে উদ্বোধন হয়েছে ইনস্টিটিউট, তারপর পেরিয়ে গেছে আরও চার মাস। কিন্তু এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি এই বিশেষায়িত হাসপাতাল।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যন্ত্রাংশ স্থাপন, বৈদ্যুতিক সংযোগ ও জনবল নিয়োগ বিষয়ক জটিলতার কারণেই এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি নবনির্মিত বার্ন ইনস্টিটিউটে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জটিলতা এখন নিরসনের দিকে। মাস দুয়েকের মধ্যে হয়তো এই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।

ইনস্টিটিউটের সম্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালু করার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু কিছু কাজ এখনও বাকি আছে, সেগুলো একটু সময়সাপেক্ষ। যেমন— যন্ত্রপাতি। এই হাসপাতালের যন্ত্রপাতিগুলো বিশ্বমানের। এগুলোর প্রতিটির প্রি-শিপমেন্ট ইনস্পেকশন হচ্ছে। আমাদের এক্সপার্ট, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যারা রয়েছেন, তারা যাচ্ছেন। এই প্রি-শিপমেন্ট, কোনোটা জার্মানিতে, কোনোটা যুক্তরাষ্ট্রে, কোনো কোনোটা অন্য কোনো দেশে। প্রি-শিপমেন্টের পর আবার শিপমেন্ট হবে। এর জন্য ৪০ দিনের মতো সময় লাগবে। এসব কারণে সময় লাগছে। তবে কিছু মালামাল এসে পৌঁছেছে, কিছু পথে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুতে দেরি হওয়ার পেছনে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে মতবিরোধও কাজ করছে। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এত বড় ও সংবেদনশীল একটি হাসপাতালের জন্য বৈদ্যুতিক সংযোগও লাগবে বড়। সাধারণ সংযোগ দিয়ে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। নীলক্ষেত থেকে রাস্তা কেটে তার আনতে হবে। এটা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও সিটি করপোরেশনের বিষয়। এটা নিয়ে কিছু প্রশাসনিক জটিলতা ছিল, সেগুলো গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। ডিপিডিসি কথা দিয়েছে, আজ (২৬ জানুয়ারি) থেকে কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে মাস দুয়েক সময় লাগবে। সংযোগ লেগে গেলে সব মালামাল বসানো হবে, টেস্ট হবে। এটা পুরোটাই অবকাঠামোর বিষয়।

হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের বিষয়ে ড. সামন্ত লাল বলেন, ভবনের কাজ শেষ হয়েছে আগের সরকারের একদম শেষ সময়। এখন নতুন সরকার, নতুন মন্ত্রিসভা, নতুন মন্ত্রী। আগামী সপ্তাহে আমরা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব— সবাইসহ বসে জনবলের সমস্যা সমাধান করব। আশা করছি, আগামী জুন-জুলাইয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারব।

এই হাসপাতালের জন্য প্রায় ২২শ জনবল দরকার হবে জানিয়ে এই ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে যে আদেশ আসবে, যেভাবে জনবল ঠিক করে দেওয়া হবে, সেভাবেই নিয়োগ হবে।

হাসপাতাল ও ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য রাস্তা কাটা ও পরে মেরামত নিয়ে ডিপিডিসি ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে মতানৈক্য থাকায় কাজ শুরু হয়নি। প্রায় অতিরিক্ত আট গুণ বেশি দাম এবং কয়েকগুণ বেশি জামানত নির্ধারণ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডিমান্ড নোট দিয়েছে। এ কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে এবং সংস্থা দু’টির মধ্যে মতানৈক্য চলছে। তবে অনেক আলাপ-আলোচনার পর ২৬ জানুয়ারি নীলক্ষেত থেকে কাজ শুরু হয়েছে।

ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ২৬ জানুয়ারি সকালে কাজ শুরু হয়েছে। যদিও এখনও অনেক কিছুর সমাধান হয়নি, তারপরও জরুরি ভিত্তিতে আমরা কাজ শুরু করেছি।

সিটি করপোরেশনের কয়েকগুণ বেশি জামানত নির্ধারণ করার বিষয়টির কোনো সমাধান হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিকাশ দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, এখনও সমাধান হয়নি। মেয়র সাহেবকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে যেন বিষয়টি দেখা হয়। কিন্তু তারপরও অনেকগুলো ‘মিসম্যাচ’ আছে। এটা আমরা আপিল করেছি। দেখা যাক কী হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহের ভেতরে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা এরই মধ্যে চিঠি দিয়ে দিয়েছি, কোনো সমস্যা হবে না।

উল্লেখ্য, প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলা ভবনে এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মাটির নিচে রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিন তলা বেজমেন্ট, যেখানে রেডিওলজিসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি হাসপাতালে হেলিপ্যাড থাকা এই ভবনেকে ভাগ করা হয়েছ তিনটি ব্লকে। একদিকে থাকবে বার্ন, অন্যদিকে থাকবে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। তৃতীয় ব্লকটি থাকবে একাডেমিক ভবনের জন্য।

অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এই ইনস্টিটিউটে থাকছে একশটি কেবিন। হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিটে থাকছে ৬০ বেড, ১২টি অস্ত্রোপচার থিয়েটার এবং অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অত্যাধুনিক চিকিৎসা এখানে দেওয়া হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হবে নতুন এই ভবনের।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এই ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে গত ২৪ অক্টোবর এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

বার্ন ইউনিট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর