দুর্নীতিবাজদের নাম জানালে ব্যবস্থা: টিআইবিকে দুদক চেয়ারম্যান
২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩২
।।সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত দুর্নীতিবিষয়ক প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘তারা যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে রিপোর্টে ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগার থাকতে হবে। এই হয়েছে, সেই হয়েছে, এমনটা বললে আমরা কী করতে পারব? বরং দুর্নীতি কে করেছে, তা উল্লেখ করলে ব্যবস্থা নিতে পারব।’ মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে দুদকের নিজ কার্যালয়ে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘টিআইবিকে অনেক আগে থেকে বলে আসছি, আপনারা কোন পদ্ধতিতে দুর্নীতির সুচক তৈরি করেন। কোনোবারই তারা উত্তর দিতে পারেননি। এবার তারা যে রিপোর্ট দিয়েছেন, সেখানে আগের চেয়ে দুর্নীতি বেড়েছে বলা হয়েছে। দেশের মানুষ দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের রিপোর্টে দুর্নীতি বাড়ার কারণ কী আর কী ব্যবস্থা নিলে দুর্নীতি কমবে, এগুলো উল্লেখ না থাকলে সে রিপোর্ট আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করব না। টিআইবি বলছে দুর্নীতি বেড়েছে, এটা ভালো। কারণগুলো, কোন প্রেক্ষাপটে বেড়েছে সেগুলো থাকতে হবে।’
টিআইবির সঙ্গে দুদকের সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চাইব, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, জনসচেতনতা বেড়েছে। সেই অনুযায়ী টিআইবি রিপোর্ট তুলে ধরুক।’
টিআইবির রিপোর্ট অনুযায়ী শীর্ষ দুর্নীতিবাজরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক রাঘব বোয়ালকে আমরা ধরতে পারিনি ঠিকই, তবে চেষ্টা করছি বিকল্প ব্যবস্থা নিতে। কেউ বিদেশে বসে থাকলে তাকে ধরা যায় না।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৮’ প্রকাশ উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম স্থানে। ২০১৭ সালে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭ তম। ২০১৮ সালে দুর্নীতি বেশি হওয়ায় ৪ ধাপ নিচে নেমে গেছে বাংলাদেশ। দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১০০ এর মধ্যে ৪৩ স্কোরকে গড় স্কোর হিসাবে বিবেচনা করলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্কোর ২ পয়েন্ট কমে হয়েছে মাত্র ২৬। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই স্কোর দুর্নীতির ব্যাপকতায় উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন: দুর্নীতিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়, বিশ্বে ১৩তম: টিআই
অর্থপাচার সম্পর্কে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এক বছরে দেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে পত্রিকায় একটি নিউজ হয়েছে, সেটি আমলে নিতে গিয়ে দেখতে পাই কে কীভাবে কোথায় টাকা পাচার করেছে, তার কোনো হদিস নেই। মহাসমুদ্রে কাকে খুঁজব? এ রকম রিপোর্টের কোনো আগামাথা নেই। মনগড়া বক্তব্য লিখলেই হবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘কেউ কেউ বায়াস্ট হয়েও লেখে। কাউকে ধরতে গেলে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দুদক আইন অনুযায়ী আমরা সব জায়গায় অভিযান অব্যাহত রেখেছি। গত কিছু দিন আগে বিদেশে পলাতক লুৎফর রহমান বাদলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছি। লন্ডনে বা বিদেশে বসে থাকলে তো কাউকে ধরতে পারব না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সব জায়গায় বিরাজ করছি। অনুসন্ধান করছি। এতে আমাদের কেউ বাধা দিচ্ছে না। দুদক সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে।’
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল পরিদর্শন সম্পর্কে বলতে গিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইন আছে, দণ্ডবিধি আছে, কোথায় কী করতে হবে, তা জানি। না জেনে স্কুলে অভিযানে যাইনি। তফসিলভুক্ত কাজের মধ্যেই পড়ে এটি। অনেকে টকশোতে বলেন, এটা দুদকের কাজ নাকি? যারা বলেন, তারা দুদকের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে মামলা করুক। সেখানে আইন দেখানো হবে। আদালত ব্যবস্থা নেবে।’
দুদকের মামলায় টাঙ্গাইলের জাহালম নামে এক যুবক অন্যের হয়ে জেল খাটছেন, এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। যখনই আমরা জানতে পেরেছি, তখনই বিষয়টি চিহ্নিত করেছি। আমরা আদালতকেও বিষয়টি বলেছি। কোনো আসামিকে তো আমরা শনাক্ত করি না। মামলার বাদী জাহালমকে ছালেক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পুলিশ জাহালমকে ছালেক হিসেবে ধরেছে।’
এ জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় ত্রুটিকে দায়ী করে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল করা হয়েছে, পুলিশ ভূল করেছে, বাদি ভূল করেছে, দুদকের দায় থাকতে পারে। উচ্চ আদালত আমাদের ডেকেছেন। আমরা নিশ্চয়ই যাবো। জাহালমের মুক্তির পর আমরা এটি তদন্ত করব।’ কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/ইউজে/এমএনএইচ/