Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেউ জানে না কবে হবে জাবি ছাত্রলীগের হল কমিটি


৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৪২

।। জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর দুই বছর পার হয়ে গেছে। নিয়ম অনুসারে, যেকোনো কমিটির মেয়াদ এক বছর থাকলেও বর্তমান কমিটি ইতিমধ্যেই পার করেছে প্রায় ২৫ মাস। তবে এখনো হয়নি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্র বলে পরিচিত নতুন হলের কমিটি।

জানা যায়, হল কমিটি দেয়ার জন্য পদ প্রত্যাশীদের কাছ বেশ কয়েকবার জীবনবৃত্তান্ত নিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এমনকি কমিটি ঘোষণার সম্ভাব্য সময় বলে পদ প্রতাশীদের বারবার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্য বিশিষ্ট জাবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটিতে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. জুয়েল রানাকে সভাপতি ও শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এক বছরের জন্য এ কমিটি দেওয়া হয়।

এরপর ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। তবে এক বছর মেয়াদী সেই কমিটি ২ বছর অতিবাহিত করলেও এখনো হল কমিটি দিতে পারেনি।

জাবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এখন শৃঙ্খলা নেই

এছাড়া হল কমিটিকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে শাখা ছাত্রলীগ। ভেঙ্গে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। এমন সব কথা বলছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই।

শাখা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি বলেন, জাবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এখন শৃঙ্খলা নেই। নেতাকর্মীদের মধ্যে নেই চেইন অব কমান্ড। হল কমিটি না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। আর হল কমিটি না হওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি ছাড়া কেউই খুশি না। আমরা বারবার হল কমিটি চেয়েছি কিন্তু তারা শুধুই আশ্বাস দিয়ে গেছেন। আর আমাদের মনে হয় না, এই কমিটির পক্ষে আর হল কমিটি দেয়া সম্ভব। এজন্য আমরা এখন আর এই কমিটি নিয়ে ভাবছি না। আমরা চাই এই কমিটি মেয়াদ শেষ হয়েছে এখন নতুন কমিটি দেয়া হোক।

বিজ্ঞাপন

গত ডিসেম্বরে শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘ছাত্র সমাবেশ ও নির্বাচনী কর্মীসভা’য় জাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল কমিটি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ‘আমি আগেই তাদের (শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক) বলেছি হল কমিটি দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এতদিনেও কেন হল কমিটি হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।’

পদ প্রত্যাশীরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি হলেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় এবং নেতৃস্থানীয়। এজন্য শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদেরকে পদ না দিয়ে হল কমিটির শীর্ষ পদের জন্য বাছাই করে রাখা হয়। কিন্তু দীর্ঘকাল হয়ে গেলেও এখনো কমিটি দেয়া হচ্ছে না।

যদি বলে আবার বিপদে পড়ি!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি হলের সভাপতি পদপ্রার্থী এক কর্মী জানান, ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার উদাসীনতার কারণে হয়তো কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। হল কমিটির শীর্ষ পদ প্রত্যাশী যারা, তারা জাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ভালো পদ পেতেন। কিন্তু হল কমিটির শীর্ষ পদের জন্য তাদেরকে রাখা হয়েছে। এখন কমিটি দেওয়া হচ্ছে না। আর সভাপতি-সম্পাদকের কাছের লোক হওয়ায় আমরা কমিটির কথা তাদের বলতেও পারি না।

তিনি আরও বলেন, হলের রাজনীতি হলো আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্র। হলের কমিটি থাকলে হলের মাদক থেকে শুরু করে, ডাইনিংয়ে খাবারের দুরবস্থা, চুরি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু কমিটি না থাকায় বিপদের আশঙ্কায় কেউ দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে চায় না।’

অন্য একটি হলের সভাপতি পদপ্রার্থী এক কর্মী বলেন, বহুবার আশ্বাস দিয়েও হল কমিটি দিচ্ছে না। আর কমিটির কথা সভাপতি-সেক্রেটারিকে বলা যাচ্ছে না। যদি বলে আবার বিপদে পড়ি!

বিজ্ঞাপন

বাইরের হস্তক্ষেপ থাকবেই, রাজনীতিতে এটা ব্যতিক্রম কিছু না

কমিটি ঝুলে থাকার পেছনে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার হস্তক্ষেপ দায়ী বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। তারা বলছেন, সেই নেতার পছন্দের লোকদের হল কমিটিতে শীর্ষ পদ দেয়া নিয়ে বর্তমান কমিটির এক শীর্ষ নেতার সাথে মনোমালিন্য রয়েছে। আর এ কারণেই কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা পদ-প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সিভি নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা সবার বাসায় খোঁজ খবর নিয়েছি যদি আমাদের আদর্শের বাইরে কেউ থেকে থাকে তারা যেন কমিটিতে না আসতে পারে। আর ত্যাগী ও পরিশ্রমীরাই যেন পদ পায়। এজন্য আমরা ভেবেচিন্তে কমিটি করছি।’

সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অতিসত্ত্বর কমিটি দিয়ে দেব। আর কমিটি গঠনে তো যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। কারা রাজনীতিতে থাকবে, থাকবে না। আসন্ন হল কমিটিতে যারা আসছে তারা গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন হবে সেভাবেই আমরা কাজ করছি।’

বাইরের হস্তক্ষেপ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাইরের হস্তক্ষেপ তো থাকবেই। রাজনীতিতে এটা ব্যতিক্রম কিছু না।’

সারাবাংলা/ আরএ

ছাত্রলীগ জাবি হল কমিটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর