সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীকে ২৯ দফা প্রস্তাব ডিএমপির
৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২৫
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বারবার ট্রাফিক সপ্তাহ, পক্ষ বা মাস পালন করেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছে না পুলিশ। এখনও রাজধানী ঢাকার রাজপথে যেকোনো কর্মদিবসে তীব্র যানজটে নাজেহাল হতে হয় নগরাবাসীকে। বিভিন্ন পথেই যানজটের এই তীব্রতা থেকে রেহাই চান নগরবাসী, তাদের চাহিদাকে মাথায় রেখে যানজটমুক্ত নগর উপহার দিতে চায় পুলিশও। তারই অংশ হিসেবে এবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ২৯ দফা প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সই করা ২৯ দফার প্রস্তাব বিবরণী আকারে পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর স্বার্থে ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এতে ২৯টি দফা রয়েছে। এই সুপারিশ অনুযায়ী ডিএমপিকে কাজ করতে দেওয়া হলে ঢাকা শহরের যেমন শৃঙ্খলা ফিরবে, তেমনি জনজীবনেও স্বস্তি আসবে।
যা আছে ডিএমপির ২৯ দফা প্রস্তাবনায়
ডিএমপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৩০টি বাস স্টপেজ উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে; এরই মধ্যে বেশকিছু স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও নতুন নতুন জায়গা চিহ্নিত করে প্রয়োজনে ইজারার মাধ্যমে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধে রোড ডিভাইডার উঁচু করতে হবে; পরিবহনগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজে ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়াবে, যাত্রীরা টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে উঠবে এবং চলন্ত অবস্থায় বাসগুলো দরজা বন্ধ করে চলাচল করবে— সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সড়কে রোড মার্কিং মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট করতে হবে; ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে; এরই মধ্যে সরকারের অনুমোদন পাওয়া ট্রাফিক কারিগরি ইউনিটের জন্য জনবল যত দ্রুতসম্ভব নিয়োগ করে ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করতে হবে; দেশে যানবাহনের তুলনায় দক্ষ চালকের সংখ্যা মাত্র অর্ধেক হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ চালক তৈরি করতে হবে; সিটি করপোরেশনের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস রুট বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে; রাস্তার পাশে ১০ তলা বা তারও কম তলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।
মানসম্মত বাস দিয়ে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি রাজধানীর মিরপুর-নীলক্ষেত সড়ক, উত্তরা-কুড়িল-বাড্ডা-মতিঝিল, বিমানবন্দর-বনানী-মহাখালী-ফার্মগেট-বাংলামোটর-শাহবাগ-মতিঝিল, কাকরাইল-মগবাজার-মহাখালী সড়ক থেকে রিকশা তুলে দিয়ে তা গলিতে চলার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ডিএমপি আরও প্রস্তাব করেছে— যানজট নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট রঙের স্কুল বাস ব্যবস্থা চালু করতে হবে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ উদ্যোগ নিতে পারে), রাজধানীতে যাত্রী পরিবহনের জন্য উবার ও পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবায় যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিলিং নির্ধারণ করতে হবে ও সিএনজিকেও অ্যাপের আওতায় আনতে হবে; পুশ বাটন চালু করার মাধ্যমে যাত্রী পারাপারের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে চিহ্নিত করা এলাকাগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে; এলিভেটেট পার্কিং ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে; বিআরটিএর মাধ্যমে ড্রাইভিং ও যানবাহনের লাইসেন্সের হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করতে হবে; বিআরটিসির মাধ্যমে নতুন বাস দিয়ে ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যেখানে ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-আজিমপুর, মালিবাগ-খিলগাঁও-মতিঝিল, উত্তরা-মতিঝিল, উত্তরা-সায়েদাবাদ, উত্তরা-গুলশান চক্রাকার রুট, মিরপুর-ভুলতা, গাবতলী-আসাদগেট-সাইন্সল্যাব-শাহবাগ-পল্টন-গুলিস্তান-সদরঘাট ও উত্তরা-মহাখালী-মগবাজার-কাকরাইল-পল্টন মোড়-দৈনিক বাংলা-মতিঝিল রুটে এসি বাস চালু থাকবে; ঢাকা-গাজীপুর ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ঘন ঘন কমিউটার ট্রেন চালু করতে হবে; নির্মাণ সামগ্রীর অপ্রয়োজনীয় অংশ রাস্তা থেকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
ডিএমপির প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ওভারব্রিজ স্থাপন ও রোড মার্কিংসহ আধুনিক করিডোর হিসেবে উন্নত করতে হবে; ঢাকা শহরের অধিকাংশ রাস্তা উত্তর-দক্ষিণ বরাবর হওয়ায় পূর্ব-পশ্চিম বরাবর রাস্তা চালু করে মানসম্মত পরিবহন নামাতে হবে; রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে নীতি নির্ধারণ করতে হবে; সিগন্যালে স্টপ লাইন বরাবর গাড়ি দাঁড় করানোর পাশাপাশি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পথচারী পারাপারে জোর দিতে হবে ও বামের লেন সবসময় ফাঁকা রাখতে হবে; পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে প্রয়োজনে পুলিশ, স্কাউট সদস্য ও আনসার মোতায়েন রাখতে হবে; হর্নের ব্যবহার সীমিত করতে প্রয়োজনে হাইড্রলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করতে হবে; মেট্রোরেলের কাজ চলাকালীন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে হবে; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রস্তাবিত ইউলুপগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে; পথচারীদের লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি বিলির মধ্য দিয়ে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং ব্যবস্থাগুলো যথাযথভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে।
ডিএমপি আশা করছে, এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীর যানজট সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর