২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠবে: রাষ্ট্রপতি
৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:১৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘এসডিজি অর্জনে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সমন্বয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির মহাসড়কে সংযুক্ত হবে।’ বুধবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশে-বিদেশে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১’ প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ রূপকল্প ২০৪১ প্রণয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া শতবর্ষী ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণীত হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত সরকার কর্তৃক প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ৬ষ্ঠ ও ৭ম ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়। ৬ষ্ঠ ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ৭ম ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’র সঙ্গে এসডিজি’র প্রায় ৮২ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করে তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল সূচকে রূপকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে,—বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক আট-ছয় শতাংশ। বাংলাদেশ আজ জিডিপি ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্ব-অর্থনীতিতে ৩৩তম এবং জিডিপির আকারের ভিত্তিতে ৪১তম। বর্তমানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।’
এছাড়া আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ইএফটি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাদি প্রদান; অনলাইন ব্যাংকিং; মোবাইল ব্যাংকিং; ১ কোটি ৭৫ লক্ষ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি। ব্যাংক ব্যবস্থায় ঋণ প্রদানের সুদের হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হ্রাস পেয়েছে। সুদের হারের নিম্নমুখী প্রবণতা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার বাস্তবতা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ গত ১২ মে সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। দেশে ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোবাইল সিম গ্রাহক ১৫ কোটি ৭০ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহক ৯ কোটি ১৩ লাখ। ডাক ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করে ৮ হাজার পাঁচশটি ডাকঘরের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’
‘সরকার ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৭৭৫ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৯২ শতাংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রতীক্ষিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ৬২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তিন দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলের নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।’ এ ছাড়া জনগণের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
মাদকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বহু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং মাদকপ্রবণ এলাকায় যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে।’
আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বচ্ছ পদ্ধতিতে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ, যৌক্তিক বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ এবং দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় গতি সঞ্চারিত হয়েছে।’
এছাড়া নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্যআয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো।’
সারাবাংলা/এনআর/এমআই