রিজার্ভ চুরি: নিউইয়র্ক সময় ৩১ জানুয়ারি মামলা
৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৪৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিউইয়র্ক সময় ৩১ জানুয়ারি মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এই মামলা করা হবে। তবে, কাদের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হচ্ছে তা জানায় নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি নিউইয়র্ক সময় ৩১ জানুয়ারি করা হবে। এটি বাংলাদেশ সময় রাত ১২টাও হতে পারে আবার ১ ফেব্রুয়ারিও হতে পারে। তবে, মামলা না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না’।
এর আগে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় ৩০ জানুয়ারি মামলা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবীর। গত রোববার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরী সভায় রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সভায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়ে রোববার রাতে তিন সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ঢাকা ছেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনো ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। বাংলাদেশ সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছে। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধি দলের বাকি তিন সদস্য হলেন— বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়ালি ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মো. রাজী হাসানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও দু’জন কর্মকর্তা।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন’র (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ফিলিপাইন থেকে আরো ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। পরবর্তী ২ বছরের বেশি সময়ে আর কোনো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ফিলিপাইনে থাকা অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৫৫৭ কোটি টাকা) এখনো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। কবে আনা যাবে কিংবা আদৌ আনা যাবে কিনা তা নিয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। আর এই অর্থ ফেরত আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন মামলা করতে যাচ্ছে। কিন্তু কাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে গত তিন বছরে তা চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে এখনো এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম