নির্বাচনের ৮ মাস পর সরকার গঠন লেবাননে
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২১
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর সরকার ঘোষণা হয়েছে লেবাননে। ঐকমত্যের এই সরকারে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন সর্বশেষ সরকারে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সাদ আল-হারিরি। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। সরকারের ৩০ সদস্যের মন্ত্রিসভায় থাকছেন চার জন নারী সদস্য। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছেন একজন নারী।
ধ্বংসের মুখে থাকা লেবাননের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করে ঋণের বোঝা কমানোটাই হবে দেশটির নতুন সরকারের প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বিবিসি ও আল জাজিরার খবরে বলা হয়, গত মে মাসে লেবাননে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সরকার গঠনের যে বিধান দেশটিতে রয়েছে, তা মেনে এতদিন পর্যন্ত সরকার ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় সব দলের প্রতিনিধিত্ব রেখেই গঠন করা হয়েছে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা।
বৃহস্পতিবার লেবাননের নতুন এই সরকার ঘোষণা করা হয়। এই সরকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন আলি হাসান খলিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জিবরান বাসিল। তারা দু’জনেই আগের সরকারেও একই দায়িত্বে ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া চার নারীর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন রিহা আল-হাসান।
অন্যদিকে, ঐকমত্যের এই সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শিয়াপন্থি আন্দোলন হিজবুল্লাহ সমর্থিত জামিল জাবাক। যদিও তিনি নিজে হিজবুল্লাহ’র সদস্য নন। জামিল জাবাকের অধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় লেবাননের বাৎসরিক বাজেটের চতুর্থ শীর্ষ বরাদ্দ পাওয়া খাত। এর ফলে এর আগের সরকারে উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান না থাকা হিজবুল্লাহ এবার বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। অন্যদিকে, শিয়া আন্দোলনে যুক্ত এই সংগঠনকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান।
নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ
দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা লেবাননের অর্থনৈতিক সংস্কারকেই নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশটি ঋণের ভারেও জর্জরিত, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় দেড় গুণ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া হারিরি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অনতিবিলম্বে সাহসী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
সরকার ঘোষণার পর রাজধানী বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে হারিরি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছি। বিশেষত নির্বাচনের পর থেকে আমাদের কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাড়ি দিতে হয়েছে। এখন সেই পাতা উল্টে আমাদের কাজে নেমে পড়তে হবে।
দেশটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে গঠিত সাবা পার্টির সদস্য ভিকি খৌরি বলেন, নতুন সরকারকে প্রথমেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে হবে।
সরকার গঠনের জটিলতা
লেবাননে মূলত সরকার গঠন করতে হয় ধর্মীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে, যেন সব ধর্মের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন সম্ভব হয়। তাছাড়া দেশটির প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারকে পৃথক পৃথক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের হতে হয়। ফলে সব পক্ষের অংশগ্রহণ ও সম্মতিতে সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। যে কারণে দেশটিতে সরকার গঠনে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এর আগে, ২০০৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে সময় লেগেছিল পাঁচ মাস। ২০১৩ সালের নির্বাচনের ১০ মাস পর গঠিত হয়েছিল সরকার। এবারে এই সময় লাগল আট মাসেরও বেশি।
সারাবাংলা/টিআর