Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হোয়াটসঅ্যাপে বই লিখে শরণার্থীর পুরস্কার জয়


১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:২২

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

ইরানের কুর্দি সম্প্রদায়ের সদস্য বেহরুজ বুচানি। ছয় বছর আগে বৈধ ভিসা ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া প্রবেশ করতে গিয়ে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন পাপুয়া নিউ গিনির মানুস দ্বীপে। সেই বন্দিদশাতে থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে তিনি লেখা পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান এক প্রকাশককে। সেসব মেসেজ থেকেই পাওয়া লেখা অনুবাদ করে প্রকাশক তৈরি করেছেন পাণ্ডুলিপি, প্রকাশ করেছেন বই ‘নো ফ্রেন্ড বাট মাউন্টেইনস: রাইটিং ফ্রম মানুস আইল্যান্ড’। হোয়াটসঅ্যাপে লেখা সেই বইই জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় সাহিত্য পুরস্কার ‘ভিক্টোরিয়ান প্রাইজ ফর লিটারেচার’।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ৯ ক্যাটাগরিতে ভিক্টোরিয়া পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক লিটারেচার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন বেহরুজ বুচানি। এর আর্থিক মূল্যমান এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। শুধু তাই নয়, তার বইটি পুরস্কার জিতে নিয়েছে সেরা নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে। এর আর্থিক মূল্যমান ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। দুই ক্যাটাগরিতে মোট সোয়া লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫ লাখ টাকা) জিতলেন বুচানি।

অবৈধ উপায়ে ও অবৈধ পথে অস্ট্রেলিয়ায় আসা শরণার্থীদের বিষয়ে দেশটির অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। বিশেষ করে দেশটিতে আশ্রয় নিতে সাগর পেরিয়ে যারা উপকূলে হাজির হয়, তাদের স্থান হয় সোজা ডিটেনশন সেন্টারে। সাগর পেরিয়ে বৈধ শরণার্থীরা হাজির হলেও তাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেয় অস্ট্রেলিয়া। দেশটির ভাষ্য, অত্যন্ত বিপদজনক সাগর পথে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল ঠেকাতেই তাদের এমন কঠোর অবস্থান।

বিজ্ঞাপন

ঠিক এমন নীতির কারণেই বেহরুজ বুচানির স্থানও হয় পাপুয়া গিনির মানুস দ্বীপে। বন্দি অবস্থাতেও থেমে থাকেননি তিনি। মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ হয়ে ওঠে তার সহায়। একজন প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তার কাছেই পাঠাতে থাকেন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। তবে সেটা ফারসি ভাষায়। প্রকাশক সেই মেসেজগুলো অনুবাদ করিয়ে জমা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত সেসব মেসেজের অনুবাদ দিয়েই দাঁড়িয়ে যায় ‘নো ফ্রেন্ড বাট মাউন্টেইনস: রাইটিং ফ্রম মানুস আইল্যান্ড’ বইয়ের পাণ্ডুলিপি।

বিচারকরা বলছেন, বুচানের বইটি অসাধারণ একটি শিল্পকর্ম ও তত্ত্বের সংমিশ্রণ, যা সরল বর্ণনা এড়িয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে। তার লেখা সুন্দর ও সুস্পষ্ট। তার লেখায় গোটা বিশ্ব থেকেই বয়ে আসা সাহিত্যের ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে, কিন্তু সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে কুর্দি রীতি অনুসরণ করেই।

ভিক্টোরিয়ান সাহিত্য পুরস্কারের জন্য লেখককে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা হতে হয় এবং তার লেখা বই অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত হতে হয়। বুচারি অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠান হুইলার সেন্টার বিচারকদের সুপারিশ মেনে নিয়ে বুচানির বইটিকে ছাড় দিয়েই পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করেছে।

বুচানি যে ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন, নানা বিতর্কের কারণে ২০১৭ সালে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই ডিটেনশন সেন্টারে থাকা তার মতো আরও কয়েকশ শরণার্থী ও আশ্রপ্রার্থীর স্থান হয় বিকল্প এক সেন্টারে, তবে সেটাও মানুস দ্বীপে। ভিক্টোরিয়া সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার দিন বিজয়ীরা যখন মেলবোর্নে উদযাপনে ব্যস্ত, তখনও বেহরুজ বুচানি আটকা পড়ে রয়েছেন সেই দ্বীপে। সেখানে বসেই শুনেছেন পুরস্কার পাওয়ার কথা। জানিয়েছেন, পুরস্কার পেয়ে তার অনুভূতিটা মিশ্র, পরস্পরবিরোধী।

তিনি বলেন, একদিন থেকে আমি খুবই খুশি। কারণ এর মাধ্যমে কিছু মানুষের নজরে আমরা আসব এবং মানুষ আমাদের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে। এটি অসাধারণ একটি বিষয়। কিন্তু এর বিপরীত দিকটিও ভেবে দেখতে হবে। এই পুরস্কার পেয়েও আমার কেবলই মনে হচ্ছে যে এই পুরস্কারপ্রাপ্তির অর্জন উদযাপন করার অধিকার আমার নেই। কারণ আমারই অনেক অনেক বন্ধু ঠিক এখানেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে।

বুচানি বলেন, ‘আমাদের প্রথম চাওয়া মুক্তি এবং এই দ্বীপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন একটি জীবন শুরু করা।’

কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে কেন লিখতে শুরু করলেন বেহরুজ বুচানি? তিনি বলছেন, কাগজ-কলমে লেখার উপায় ছিল না। কারণ প্রতি সপ্তাহ বা মাসে গার্ডরা আমাদের রুমে আসত এবং আমাদের কী আছে না আছে, সেগুলো সব ওলটপালট করে দেখত। ফলে আমার ভয় হতো যে কাগজে লিখে রাখলে সেগুলো হয়তো ওরা নষ্ট করে ফেলবে। তার চেয়ে বরং লিখে লিখে কারও কাঠে পাঠিয়ে দেওয়াটাই ভালো মনে করতাম। হোয়াটসঅ্যাপকে মূলত নিজের অফিস মনে করতেন বলেও জানান তিনি।

গত বছর বুচানের বই বের হলেও তিনি লেখালেখির জন্য সুপরিচিত। প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানে নিয়মিত লিখতেন তিনি। এছাড়া নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টেও ছিলেন সক্রিয়। শুধু তাই নয়, নিজের ফোন ব্যবহার করে ‘চাকুয়া, প্লিজ টেল আস দ্য টাইম’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও বানিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে মানুস দ্বীপের ডিটেনশন সেন্টারে আটকা পড়া শরণার্থী বা আশ্রয় প্রার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

এদিকে, পাপুয়া নিউ গিনির মানুস দ্বীপের পাশাপাশি দ্বীপরাষ্ট্র নাউরুতেও অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্থান দেয় অস্ট্রেলিয়া। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এসব দ্বীপের ডিটেনশন সেন্টারে আটক শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সম্মত হয়। সেই সময় থেকে শতাধিক শরণার্থীর পুনর্বাসন হয়েছে। বুচানি নিজেও মার্কিন কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, কিন্তু কোনো ডাক পাননি পুনর্বাসনের জন্য।

বুচানি জানান, সাংবাদিকতা করতেন ইরানে। কিন্তু ভয় ছিল, এর জন্য কারাবরণ করতে হতে পারে তাকে। সে কারণেই তিনি আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু আশ্রয়ের বদলে তাকে দিন কাটাতে হচ্ছে কারাগারে।

এই মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তার মতো আরও অনেককেই। তাদের সবার পক্ষ থেকে বুচারি আর্তি একটাই, ‘আমরা দেবদূত নই, আমরা শয়তানও নই। আমরা মানুষ, খুব সহজ-সরল মানুষ। আমরা নিষ্পাপ মানুষ।’

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন

সারাবাংলা/টিআর

বেহরুজ বুচানি মানুস দ্বীপ শরণার্থী

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর