‘ভুল বোঝাবুঝি থেকেই ধর্মের নামে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়’
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:৩৯
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পৃথিবীর সব ধর্মই পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতিশীল হওয়া, অন্যের ধর্মকে ঘৃণা না করা ও আত্মসংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘ধর্ম পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম। অনেকে নিজের বা অন্যের ধর্ম সম্পর্কে না জানার কারণে ধর্ম সম্পর্কে ভুল বোঝেন। আর এই ভুল বোঝাবুঝি থেকেই ধর্মের নামে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই সংঘাতময় পরিস্থিতি শান্ত করার অনেক মাধ্যমের একটি হলো সংলাপ।’ শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশ্ব আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সপ্তাহ’ উপলক্ষে ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বা সংলাপে নারীর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
তিন দিনব্যাপী এই কর্মশালা শুক্রবার শুরু হয়ে আগামী রোববার (০৩ ফ্রেব্রুয়ারি) শেষ হচ্ছে।
মো. আবু তাহের বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঋগবেদ, শ্রীমদভগবদগীতা, বাইবেল, কোরানে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের কথা বলা আছে৷ তাছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশের বড় বড় দার্শনিকরাও এর গুরুত্ব দেখিয়েছেন। বিশিষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কাজী নূরুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ চালু হয়।’ তিনি বলেন, ‘এদেশের শিক্ষার্থীরা যাতে ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে জেনে আলোকিত মানুষ হতে পারে সে লক্ষ্যে বিভাগটি আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিভাগটির অধীনে আন্তঃ ধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ কেন্দ্র অনুমোদিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেন্দ্রটি সংলাপের মাধ্যমে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
সমাজে ধর্মকে নারীর চোখে দেখা হলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর হবে বলে মতামত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিন্নাত হুদা। তিনি বলেন, ধর্মকে যদি নারীর চোখে দেখা হয় তবে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর হবে। সুদৃঢ় হবে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসংস্কৃতি সংলাপ কেন্দ্রের পরিচালক ও বিশ্ব ধর্ম সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফাজরিন হুদা।
তিনি বলেন, ধর্ম একটি সামাজিক কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি ধর্মে নারীকে বড় করে দেখানো হয়েছে। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বা সংলাপে নারীর অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মা যদি এই বিষয়ে জানে তাহলে সন্তানকেও তিনি সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন। আজকে সারাবিশ্বে প্রধান সমস্যা সন্ত্রাস, ধর্মীয় বিভেদ ও জঙ্গিবাদ। এজন্য আন্তঃধর্মীয় সংলাপ হওয়া দরকার। এতে অন্য ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করার মনোভাব তৈরি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অনারারি অধ্যাপক রওশন আর ফিরোজ বলেন, গুটিকয়েক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নারী ছাড়া তৃতীয় বিশ্বে গোটা নারী সমাজ নানাভাবে অবদমিত হচ্ছে। মানুষ হিসেবে নিজের অধিকারগুলো পাচ্ছে না, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তবে বিশ্ব এখন নারীর অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সোচ্চার হচ্ছে। আমাদেরও সচেতন হতে হবে। ধর্ম নারীকে খাটো করেনি। আন্তঃধর্মীয় সংলাপে আস্তে আস্তে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। এটাই আশার ব্যাপার।
কর্মশালার উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ধর্ম সংস্কৃতি অধ্যাপক ড. কাজী নূরুল ইসলাম।
সারাবাংলা/টিসি/এনএইচ