Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাহজালালে চোরাচালান রোধে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই কাস্টমসের


১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৫২

।। শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেই কাস্টমসের আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, কন্টেইনার স্ক্যানার, ব্যাগেজ স্ক্যানার, হিউম্যান বডি স্ক্যানার, মোবাইল স্ক্যানার, স্পেকট্রোমিটার, রেডিয়েশন ডিটেকশন ইক্যুইপমেন্ট মেশিন, আর্চওয়ে, হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর, কেমিকেল ল্যাবের কাস্টমসে থাকলে চোরাচালান পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হতো।

বিজ্ঞাপন

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, দেশের বাইরে যেতে এবং বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে বিমানবন্দরে একজন যাত্রীকে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। এসব ধাপে যাত্রীর পাসপোর্ট, ভিসা এবং সঠিক ব্যক্তি কি না এবং কোনো অবৈধ অস্ত্র, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কোনো পণ্য পাচার হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়।

একজন বিদেশগামী যাত্রীকে প্রথমে এন্ট্রি গেটের চেকিং বলয় পার হতে হয়। সেখানে আর্চওয়ে ছাড়াও হ্যান্ড মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি করা হয়। এই নিরাপত্তা বলয়ে দেখা হয়, যাত্রীর কাছে কোনো ধরনের ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়স্ত্র আছে কি না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেকটর রয়েছে, তা আধুনিক নয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পার পেয়ে যায় অপরাধী। উন্নত বিশ্বে এখন অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দৃশ্যমান কোনো তল্লাশি নেই।

এরপর যাত্রীর কাছে থাকা ব্যাগ ও লাগেজগুলো বুকিং নেওয়া হয়। তবে হ্যান্ড ব্যাগ সঙ্গে নিয়েই ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করেন। ফ্লাইটের বোর্ডিং না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা ওয়েটিং লাউঞ্জে। এরপর ওয়েটিং লাউঞ্জে থেকে হোল্ডিং লাউঞ্জ। সেখান থেকে যাত্রীরা ফ্লাইটে যান। এই ধাপে যাত্রীর লাগেজগুলো স্ক্যানার মেশিনে স্ক্যান করা হয়। সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে তিনটি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে। তবে সেগুলোতে স্পষ্ট দৃশ্য দেখা যায় না। মেশিনগুলো কেনা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বিদেশ থেকে একজন যাত্রীকে শুধুমাত্র গ্রিন চ্যানেলে চেক করা হয়। সেখানে প্রথমে যাত্রীর লাগেজ স্ক্যানিং হয়, এরপর আর্চওয়ের বলয় পার হলেই বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এখানে যে লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে রয়েছে, সেটা ২০১০ সালে কেনা হলেও অনেক সময় অস্বচ্ছ ইমেজ দেখায়। ফলে ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরাও। কারিগরি ত্রুটির কারণে কাস্টমস কর্মকর্তাদেরও অনেক সময় লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। প্রায়ই বিকল থাকে গ্রিন চ্যানেলের আর্চওয়ে।

পণ্য আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়ায় চোরাচালান রোধে এয়ারফ্রেইট, কুরিয়ার ও হ্যাঙ্গার গেটে তিনটি স্ক্যানার মেশিন থাকলেও দীর্ঘ দিন থেকে তিনটিই বিকল হয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব ত্রুটি দূর করা গেলে চোরাচালান পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হবে।

এদিকে, কাস্টমস বলছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো হিউম্যান বডি স্ক্যানার মেশিন নেই। এই যন্ত্রটি থাকলে কোনো ব্যক্তির শরীরের ভেতরে লুকিয়ে অবৈধ কিছু পাচারের চেষ্টা করলে সহজেই ধরা যেত। চিহ্নিত অপরাধী ধরার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিগত অন্তরায় রয়েছে শাহজালালে। আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হলেও এখানে নেই এপিআই (অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন) সিস্টেম। উন্নত বিশ্বে ফ্লাইট ল্যান্ড করার আগেই যাত্রীদের তথ্য পৌঁছে যায় বিমানবন্দরে। ফলে চিহ্নিত কোনো অপরাধী সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকেই সতর্ক হতে পারেন।

কাস্টমসে নেই কোনো কেমিক্যাল ল্যাবও। ফলে শাহজালালে কোনো কেমিক্যাল পদার্থ এলে বা জব্দ করা হলে তা কাস্টমেরস পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এর জন্য নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ও বুয়েটের ল্যাবগুলোর ওপর। চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বেনাপোল কাস্টমসের নিজস্ব ল্যাব থাকায় তারা এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

এসব বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। সংকটগুলোর সমাধানে এনবিআর কাজ করছে। আশা করছি, শিগগিরি আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।

একই কথা বলেন ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার আব্দুল মান্নান শিকদার। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতির অনেক অভাব। ইতোমধ্যে এনবিআরকে অবহিত করা হয়েছে। তারা আমাদের কাছে চাহিদা জানতে চেয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, রাজস্ব আহরণে কাস্টমস কাজ করে যাচ্ছে। শাহজালাল থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য কাস্টমসকে বার্তা দিয়েছি। প্রথমে বিমানবন্দর, এরপর সিপোর্ট ও সবশেষে ল্যান্ড পোর্টগুলোর জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

সারাবাংলা/এটি

আধুনিক যন্ত্রপাতি কাস্টমস শাহজালাল বিমানবন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর