দ্বার খুলল অমর একুশে গ্রন্থমেলার
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৪৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ‘বিজয়: ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) দ্বার খুলল মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার। এদিন বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই পর্যন্ত ১৬বার অমর একুশে বইমেলা উদ্ধোধন করলেন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
এরইমধ্যে গ্রন্থমেলার আয়োজনের সব প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। মেলার দুই প্রাঙ্গণ—বাংলা একাডেমি ও পাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই মেলার প্রস্তুতির সব সাজসজ্জা সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণ থেকে দোয়েল চত্বর-সর্বত্রই এখন উৎসবের আবহ বিরাজ করছে। উৎসবের আবহে আজ থেকে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য় বইপ্রেমী ও লেখক-প্রকাশকদের মিলনমেলার মোহনায় পরিণত হবে।
ভাষা শহীদদের স্মৃতি-বিজড়িত ভাষার মাস ফেব্রয়ারির প্রথম দিন (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এবারের এ গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি বইমেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
এছাড়া, ২০১৮ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস্ অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-ভলিউম-২, ১৯৫১-১৯৫২-এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ বইটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ ও মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনীর সভাপতি ফরিদ আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
আরও পড়ুন: বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী রামেন্দু মজুমদার।
অনুষ্ঠানে সুরের ধারার শিল্পীরা শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের পর পুনরায় সুরের ধারায় শিল্পীরা সূচনা সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।
আজ থেকে সর্বসাধারণের জন্য বাঙালির প্রাণের মেলার দ্বার উন্মুক্ত হলো। লেখক-প্রকাশক-পাঠক আর সাহিত্যপ্রেমীরা আজ থেকে মেতে উঠবে বইয়ের ঘ্রাণে, লিখনীর উচ্ছ্বাস উদ্বেগে। মেতে উঠবে আলোচনা-আড্ডায়। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত নয়টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে মেলার সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি’র আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
এবারের গ্রন্থমেলা আয়োজন নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সারাবাংলা’কে বলেন, ‘‘বায়ান্ন’র চেতনা থেকে একাত্তর। যার ভেতরে জড়িয়ে আছে ৫৪, ৬২, ৬৬ ও ৬৯। বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের এই পথচলাকে এবার উদযাপন করা হবে মেলাজুড়ে। তিনি আরও বলেন, এর জন্য এবারের মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিজয়: বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নব পর্যায়)’। সেইসঙ্গে, ২০২০ সালে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যাত্রাও শুরু হবে এ মেলা থেকে।’’
এবারের বইমেলা পাঠকবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তিনি জানান, মেলায় ছয় শতাধিক স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া থাকবে ৪২টি প্যাভিলিয়ন। বাংলা একাডেমির ভেতরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১০০টি স্টল বরাদ্দ থাকবে বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/এনআর/একে/এমএনএইচ
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণের মেলা বাংলা একাডেমি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার