Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রামীণফোনের আরও ৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি


১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:২৪

।। শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একের পর এক ভ্যাট ফাঁকি দিয়েই চলেছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন। সম্প্রতি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর অপরিশোধিত ভ্যাট পরিশোধ না করে আরও ৯ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার ২১৯ টাকা ৩০ পয়সা ফাঁকি দিয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার পর ফাঁকিকৃত সেই রাজস্ব পরিশোধে এনবিআর থেকে বার্তা পাঠালেও প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব পরিশোধে টালবাহানা শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া গ্রামীণফোনের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়ে আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এসব বকেয়া পরিশোধ না করে কালক্ষেপন শুরু করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এলটিইউ সূত্রে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সেবার কোড এস০৭৪.০০ স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণকারী ও সেবার পরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সেই অনুযায়ী স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহনকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা যিনি বা যারা আবাসিক কাজে ব্যবহার নয় এমন কোনো স্থান বা স্থাপনা পণ্যের বিনিময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহার করার অধিকারী। অর্থাৎ স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহনকারী সেবার ওপর মূসক তথা ভ্যাট ভাড়া গ্রহণকারী কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ইহা উৎসে কর্তন নয় ভাড়া গ্রহণকারী নিজেই নিজের ভ্যাট দেবেন।

আরও জানা গেছে, গ্রামীণফোন লিমিটেড ২০১৮ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১৫০ বর্গফুটের বেশি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট প্রযোজ্য। সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের রাজস্ব কোষাগারে ভ্যাট না দিয়ে ফাঁকি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এনবিআর সূত্রে জানায়, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮১ টাকা ৫ পয়সা, জুলাই মাসে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ কোটি ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ টাকা ৪৫ পয়সা, আগস্ট মাসে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ কোটি ৬২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮ টাকা ৮৫ পয়সা,সেপ্টেম্বর মাসে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১ কোটি ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৬ টাকা ৬৫ পয়সা, অক্টোবর মাসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬৬ টাকা ৯৫ পয়সা, নভেম্বর মাসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৭ টাকা ৮৫ পয়সা ও ডিসেম্বর মাসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৮১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৩ টাকা ৩৫ পয়সা।

উল্লেখ্য, স্থান ও স্থাপনাবাবদ ভ্যাটের হার শতকরা ১৫ শতাংশ।

একইসঙ্গে এনবিআর বলছে, ‘প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৯ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার ২১৯ টাকা ৩০ পয়সার ভ্যাট পরিশোধ করেনি অর্থাৎ ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। যা পরিশোধের পূর্ব দিন পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩৭ এর উপধারা (৩) অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ আদায়যোগ্য। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির এমন কার্যাক্রম মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩, ৫, ৬,মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা ১৯৯১ এর এর বিধি ২৩, ২৪ এর লঙ্ঘন।’

শুধু তাই নয়, গ্রামীণফোনের এমন কার্যক্রম মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ এর উপধারা (১) অনুয়ায়ী গত সপ্তাহে দাবিনামা পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে অপরিশোধিত ভ্যাট কেন আদায় করা হবে না তার কারণ সম্মলিত লিখিত জবাব এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া ১৫ দিনের মধ্যে এনবিআরে কোনো ধরনের নোটিশের জবাব না দিলে আইনগতভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, গ্রামীণফোন রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে মামলা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এনবিআর ভ্যাট ফাঁকির মামলা দায়ের করলেই প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট পরিশোধ না করে আদালতে যায়। ফলে বকেয়া রাজস্ব যেমন পড়ে থাকে দীর্ঘদিন তেমনিভাবে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধ না করে সেই অর্থ দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে গ্রামীণফোন।

সম্প্রতি ৯ কোটি টাকা ফাঁকি ছাড়াও গ্রামীণফোনের কাছে বকেয়া তথা ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের মধ্যে রয়েছে সিম রিপ্লেসমেন্টে সংক্রান্ত ১ হাজার ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা ও ৩৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা,৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সিম ট্যাক্সের উপরে ৪৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, বিধি বর্হিভূত রেয়াত বাবদ ২৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং ৯৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

গ্রামীণফোনের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল সারাবাংলার কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাট ফাঁকি টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নিয়মিত একটি রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আমাদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। যারা ভ্যাট ফাঁকি দেবে তাদের বিরুদ্ধে এনবিআর আগেও যেমন সোচ্চার ছিলো সামনে আরও বেশি সোচ্চার হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান পার পেতে পারবে না। গ্রামীণফোনের কাছে আমাদের অনেক বকেয়া পড়ে আছে। এছাড়া তারা নিয়মিত ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি আমাদের নজরে আছে। কোনোভাবেই ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

সারাবাংলা/এসজে/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর