Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বইমেলা তরুণ লেখকদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়’


২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১১

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বইমেলা তরুণ লেখকদের আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেয় বলে একে ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘সব বই কখনোই মানসম্পন্ন হয় না। কিছু বই উচ্চ মানসম্পন্ন হয়, কিছু বই হয় নিম্ন মানের। কিন্তু এই যে প্রতিটি বইমেলা প্রচুর লেখক আবির্ভূত হচ্ছে, প্রচুর বই প্রকাশ পাচ্ছে, এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারি। আমি মনে করি, বইমেলা বিশেষ করে তরুণ লেখকদের আত্মপ্রকাশের যে সুযোগ করে দেয়, সেটি তাদের জন্য বড় পাওয়া। এটি আমাদের সাহিত্যের জন্য একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক।’

শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি চত্বরে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন- আসতে না পারলেও মনটা পড়ে থাকে বইমেলায়: প্রধানমন্ত্রী

এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য তুলে ধরে বাংলা একাডেমীর সভাপতি বলেন, “১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে অঙ্কুর আমাদের অন্তরে প্রোথিত হয়েছিল, তা ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। অসাধারণ আত্মত্যাগের মূল্যে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর সে কারণেই এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে ‘বিজয়: ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায়’। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রকাশনা শিল্পও একটি বড় ভূমিকা রাখবে।”

প্রতিবছরের আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে জাতির বড় একটি অর্জন হিসেবে আখ্যা দিয়ে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমীর এই মেলা একটি জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই গ্রন্থমেলা এবার ৪১ বছরে পদাপর্ণ করল। এটিই আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন বলে বিবেচনা করি।

বিজ্ঞাপন

মেলার সব বই মানসম্পন্ন হয় না স্বীকার করে এই জাতীয় অধ্যাপক বলেন, প্রতিবারেই অমর একুশে গ্রন্থমেলার পরিসর বাড়ে, প্রকাশকের সংখ্যা বাড়ে। নতুন লেখকের সংখ্যা বাড়ে, পাঠকদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেন, বই মেলায় বই প্রকাশ করতেই হবে— এমন তাড়াহুড়ায় অনেক ভুলেভরা বই প্রকাশিত হয় এবং সব বই মানসম্পন্ন হয়ে ওঠে না। তবে আমি মনে করি, এ কথা যেকোনো সময়ের জন্যই সত্য। সব বই কখনোই মানসম্পন্ন হয় না।

বইমেলা আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের মধ্যে একটি আশঙ্কা ছিল, আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ই-বুকের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে হয়তো আমাদের পাঠের অভ্যাস চলে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে অন্তত এটা হয়নি। বরং মুদ্রিত বই পাঠের আগ্রহ বেড়েছে। এই মেলায় যত বই প্রকাশিত হয় এবং যে পরিমাণ বই বিক্রি হয়, তার থেকেই আমরা এ তথ্য জানতে পারি। কাজেই মুদ্রিত বইয়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে না। উন্নত প্রযুক্তিকে আমরা অভ্যর্থনা জানাই। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও বলব— আমাদের এই সুপ্রাচীন মুদ্রিত বই, এটিও চিরজীবী হয়ে থাকবে।

মেলার উদ্বোধনী স্মারকে সই করে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন— কবিতায় কাজী রোজি, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল, প্রবন্ধে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায় আফসান চৌধুরী।

সেই সঙ্গে হাক্কানী পাবলিশার্স প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-ভলিউম-২, (১৯৫১-১৯৫২)’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ বইটি।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ, মিশরের লেখক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনীর সভাপতি ফরিদ আহমেদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

অনুষ্ঠানে সুরের ধারার শিল্পীরা শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের পর ফের সুরের ধারায় শিল্পীরা সূচনা সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ ড. আনিসুজ্জামান বইমেলা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর