কর্ণফুলী দখলমুক্ত করতে অনড় ভূমিমন্ত্রী, শুনবেন না কোনো অনুরোধ
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রভাবশালীদের দখল থেকে কর্ণফুলী নদীর পাড় মুক্ত করতে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, কারও রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) তিনি শুনবেন না।
উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরুর আগে শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর সদরঘাটে বিআইডব্লিউ ঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর পাড় পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সোমবার থেকে উচ্ছেদ শুরু হবে জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে অনেক কল এসেছে। রিকোয়েস্টও এসেছে। আমি মনে করি, এখানে রিকোয়েস্ট রাখার কোন সুযোগ নেই। দীর্ঘসময় আমরা দিয়েছি। আর কিছু করার নেই। আমরা সবকিছু বিবেচনা করেই কাজ করছি।’
নদীপাড় দখল করে রাখা প্রভাবশালীদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রভাবশালী নাই। প্রভাবশালী বলতে আমি কিছু বুঝি না। সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী কে? মহামান্য আদালতের রায় আমাদের আছে। কাজ দেখেন, কথা বেশি বলে লাভ নেই।’
২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৫ সালের জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ১৬ অগাস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে জটিলতায় ছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী জানিয়েছেন, উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আরএস মোতাবেক উচ্ছেদ শুরু হবে। নদীর পাড়কে আমরা কয়েকটা জোন ভাগ করেছি। প্রথম জোনে ২০০ স্থাপনার মতো ভাঙলে ১০ একরের মতো জায়গা পুনরুদ্ধার হবে। এখানে যারা স্থাপনা করেছেন তারা সবই জানেন এবং জানেন বলেই তারা ২০১৫ সাল থেকে স্থায়ী কোন স্থাপনা এখানে করেননি। কারণ আমরা বারবার বলেছি যে এখানে কাউকে স্থায়ী স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না। সেটা সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক। আমরা কোনোটাই ছাড় দেব না।’
উচ্ছেদের ঘোষণার পর অনেক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘লবণের কিছু স্টোরেজ এখানে আছে। আমি তাদের নিশ্চিত করেছি যে-তাদের মূল গুদাম থাকবে। কিন্তু তারা তো আসতে আসতে মূল গুদামের বাইরে নদীর পাড় পর্যন্ত চলে এসেছে। সুতরাং এখানে কিছু করার নেই। তাদের যথেষ্ঠ সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরও রোববার পর্যন্ত সময় আছে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। সুতরাং এই কাজ চলবে। ধীরে ধীরে আমরা জোন অনুযায়ী ধরে পতেঙ্গা পর্যন্ত উচ্ছেদ করব। আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
কর্ণফুলী নদীকে চট্টগ্রামের সম্পদ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং যেভাবে হোক, দলমত সবার উর্দ্ধে উঠে এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। কারণ কর্ণফুলী বাঁচলেই চট্টগ্রাম শহর বাঁচবে।’
ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো.ইলিয়াস হোসেন, উচ্ছেদের দায়িত্ব পাওয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত এবং জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন
উচ্ছেদ অভিযান কর্ণফুলী পাড় দখল ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ