Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘লোক দেখানো’ হেলমেটে সুরক্ষা মিলবে?


৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:২৩

।। সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: যেকোনো যানবাহনের দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাতে ক্ষতির আশঙ্কা ৩০ ভাগ বেশি। বিশেষ করে চালক বা আরোহীর মাথায় আঘাত লাগলে প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর সে কারণেই মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে চালক ও আরোহীর জন্য হেলমেট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটা মেনেই এখন রাজধানীর ঢাকার রাস্তায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপের রমরমা বাজারে চালক-আরোহী সবার মাথাতেই দেখা যাচ্ছে হেলমেট। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিক কিংবা ফায়ার ফাইটারদের জন্য যেসব হেলমেট তৈরি হয়, ঠিক একই রকম হেলমেটেই সয়লাব বাইকগুলো। ফলে হেলমেট ব্যবহারের আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ আদতে এসব হেলমেট যাত্রী বা চালককে কোনো সুরক্ষা দিতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

এদিকে, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো বলছে, তারা এসব হেলমেট সরবরাহ করে মূলত হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করছে। সুরক্ষার বিষয়টি মূলত চালককেই নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: দেশে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং যেভাবে শুরু

রাজধানীর রাস্তায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবারে চালিত মোটরসাইকেলগুলোয় চোখে পড়ছে কমলা রঙের হেলমেট। সাধারণ নির্মাণ শ্রমিকরা মাথায় যে হলুদ ক্যাপ বা হেলমেট ব্যবহার করে থাকেন, মূলত সেগুলোতেই নিজেদের লোগো বসিয়ে সরবরাহ করছে ‘উবার’। আবার, আর ফায়ার ফাইটাররা যে লাল হেলমেট ব্যবহার করেন, সেগুলোই ব্যবহারকারীদের দিয়েছে ‘পাঠাও’। আর নির্মাণ কাজের সাইটে কর্মকর্তারা যেসব সবুজ হেলমেট ব্যবহার করেন, সেগুলো ব্যবহার করছে আরেক রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘সহজ রাইডস’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব হেলমেটের কোনোটি কর্কশিটের তৈরি, কোনোটি প্লাস্টিকের। পিচঢালা পথে এসব হেলমেট সামান্য সুরক্ষাও দিতে সক্ষম হবে না। সেই অর্থে এসব হেলমেট পরিণত হয়েছে ‘খেলনা’ ও ‘লোক দেখানো’ হেলমেটে। অথচ তা নিয়েই ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটেও ছড়িয়ে পড়ছে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। একইসঙ্গে চালক ও যাত্রীর হেলমেট পরার বাধ্যবাধকতাও পালন করে চলেছে তারা।

অন্য যেকোনো যানবাহনের দুর্ঘটনায় চেয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩০ ভাগ বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে বলে সারাবাংলাকে জানালেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রথম আঘাত পড়ে মাথায়। এতে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব পর্যন্ত বরণ করতে হয়। যে কারণে মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীর জন্য ভালো মানের হেলমেট থাকা জরুরি।’

নিম্ন মানের হেলমেট দিয়ে এমন উচ্চ ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন রাইড শেয়ারিং বিশ্লেষক মুরাদ শুভ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ বলেই সম্ভবত শ্রমিকদের হেলমেট দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো সম্ভব হচ্ছে। অন্য কোনো দেশ হলে এসব হেলমেট ব্যবহারের কারণে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতো রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে।’

মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীর হেলমেট কী ধরনের হবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মোটামুটি একটা প্রাইভেটকারের চাকা ওপর দিয়ে চলে গেলেও কিছু হবে না— এমন হেলমেট পরতে হবে।’ রাইড শেয়ারিং কোম্পানির লোগো দেওয়া হেলমেটগুলোকে ‘লোক দেখানো’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও ধাক্কা খেলে এই হেলমেট বরং ভেঙে যাত্রীর মাথায় ঢুকে যেতে পারে।’

এদিকে, নিজেদের সরবরাহ করা হেলমেটে লোগো বসিয়ে ব্র্যান্ডিং চালিয়ে গেলেও এর মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধান বা সুরক্ষার দায়ভার নিতে নারাজ রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। তাদের বক্তব্য, মানসম্পন্ন হেলমেট রাখার দায়িত্ব মোটরসাইকেল চালকের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণসংযোগ (পিআর) এজেন্সির মাধ্যমে সারাবাংলাকে  একটি বক্তব্য পাঠিয়েছে পাঠাও। তাতে বলা হয়েছে, হেলমেট প্রথা শুরু করার জন্যে এসব হেলমেট বিতরণ করেছিল পাঠাও। নিরাপত্তার জন্য হেলমেট রাখা বাইকারের দায়িত্ব। এসব হেলমেট যে দুর্ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে ক্ষীণ ভূমিকা রাখে, তা স্বীকারও করেছে পাঠাও।

এর মধ্যে রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য গত বছর সরকার একটি নীতিমালা করেছে। ওই নীতিমালার গেজেট প্রকাশ পেলেও এখনও কার্যকর হয়নি। সেই নীতিমালাতেও যাত্রীর হেলমেট নিয়ে কিছু বলা নেই। তবে বিআরটিএ’র আইন অনুযায়ী, মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীর মাথায় হেলমেট থাকা বাধ্যতামূলক। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সড়কে অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে হেলমেট আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখেন। তবে হেলমেটের নিরাপত্তা ইস্যুতে এখনও কাউকেই সরব হতেদ দেখা যয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হেলমেট বাধ্যতামূলক। এখন কেউ যদি হেলমেটের নামে অন্য কিছু পরে করে চলাচল করে, তাহলে সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।’ বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত ভবিষ্যতে এ বিষয়টিতে নজর দেবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, নিরাপত্তা বা সুরক্ষার পাশাপাশি গণহারে ব্যবহৃত হেলমেটের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রতিদিন একটি হেলমেট বহুজন ব্যবহারের ফলে একজনের মাথায় রোগ-জীবাণু থাকলে তা অন্যদের মাথাতেও ছড়িয়ে পড়বে বলে আমঙ্কা তাদের।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম এন হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘একই হেলমেট বহুজন ব্যবহারের ফলে যাত্রীদের মধ্যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, খুশকি ও এলার্জিসহ নানা চর্মরোগ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আছে।’ ন্যাপকিন দিয়ে মাথা ঢেকে হেলমেট পরলে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মত দেন এই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ।

সারাবাংলা/এসএ/টিআর

মোটরসাইকেল হেলমেট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর