Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং যেভাবে শুরু


৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:৩৩

।। সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ঢাকায় প্রতিদিন হাজারো মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং করছে। যানজটে যখন গাড়ি আটকে আছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার। তখন পাশ দিযে সাঁই করে চলে যাচ্ছে মোটরসাইকেল। পাড়ার অলি গলি বা বাসার ভেতর থেকে মোবাইল অ্যাপে মোটরসাইকেল ডাকলেই ছুটে আসছে বহন করতে।

বাংলাদেশে খুব দ্রত বিকাশ হওয়া প্রযুক্তি নির্ভর এই ব্যবস্থা চালু হওযার ঘটনা বেশি দিন আগের নয়। এমনকি বিশ্বে রাইড শেয়ারিং এক নতুন ধারণা। এতে প্রাইভেটকার থেকে মোটরসাইকেল এখন খাবারের অর্ডার পণ্য ডেলিভারিও হচ্ছে।

বাংলাদেশে কবে কিভাবে এই রাইড শেয়ারিং এলো? রাইড শেয়ারিং ধারণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু হওয়ার পর বাংলাদেশে এসেছে। এমনকি ভারতেও বেশ কয়েক বছর থেকে চালু ছিল। কিন্তু মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশের আগে চালু ছিল না। থাইল্যান্ড এবং পরে ভারতের হাইদ্রাবাদে বাংলাদেশেরও আগে মোটরসাইকেলে যে যাতায়াত শুরু হয়েছিল সেটা ছিল মোটরসাইকেল ট্যাক্সি সার্ভিস।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অনেক গ্রামাঞ্চলে মোটরসাইকেল যাত্রী আনা নেওয়ার বাহন হিসেবে ট্যাক্সি সার্ভিসের মত ব্যবহার হতে দেখা গেছে। হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জসহ অনেক স্থানে এমন সার্ভিস এখনও চালু আছে।

তবে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ডাকা ঘটনা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম হয়েছে। সেটি প্রবর্তন করেছিলেন ইমতিয়াজ কাশেম। তিনি বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং ‘শেয়ার এ মোটরসাইকেল’ (স্যাম) অ্যাপ চালু করেছিলেন। সেটা ২০১৬ সালের ৭ মে রাজধানী ঢাকায়। ওই দিন মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং-এর ঘোষণা দেয় ‘শেয়ার এ মোটরসাইকেল’ সংক্ষেপে ‘স্যাম’ অ্যাপ ।

বিজ্ঞাপন

এটি বাংলাদেশি উদ্যোগ। এদিন থেকে ‘স্যাম’ স্মার্টফোন অ্যাপ দিয়ে দেশে মোটরসাইকেলে যাতায়াত শুরু হয়। তখনই বিষয়টি জানতে পেরে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ‘বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। এরপর কার্যক্রম শিথিল রাখে ‘স্যাম’।

ঠিক এর সাত মাসের মাথায় ঢাকায় উবার প্রাইভেটকারে রাইড শেয়ারিং চালু করে। এর পরের মাস ডিসেম্বরে দেশীয় কয়েকজন তরুণের প্রচেষ্টায় ‘পাঠাও’ অ্যাপ মোটরসাইকেল সেবা চালু করে।

২০১৭ সালে রাইড শেয়ারিং ব্যবহার পরিচিত হতে থাকে। এর মধ্যে উবার প্রাইভেটকারের সঙ্গে মোটরসাইকেল এবং পাঠাও মোটরসাইকেলের সঙ্গে কার সার্ভিস চালু করে। ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকায় লাখ লাখ মোটরসাইকেল ও হাজার হাজার প্রাইভেটকার রাইড শেয়ারিংয়ে দেখা যায়। এখন রাজধানীতে পথে নামলেই উবার পাঠাও মোটরসাইকেল প্রাইভেটকার চলতে দেখা যায়।

তবে প্রথম যখন স্যাম চালু হয় তখন এর ব্যবহার জনপ্রিয়তা পায়নি। সীমিত আকারে বেশ কিছুদিন চলার পর তা শিথিল করে দেয় স্যাম কর্তৃপক্ষ।

স্যাম অ্যাপ প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ কাশেম এ নিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, চালুর পর অনেকেই এটাকে অদ্ভুত বলেছিলেন। কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে -এটা কি করে সম্ভব অপরিচিত লোকের মোটরসাইকেলে উঠে আমি যাবো। কিন্তু এখন এটা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে অপরিচিত ছেলের মোটরসাইকেলে অপরিচিত মেয়েরাও স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। এমনকি মেয়ে বাইক রাইডার যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু কিভাবে প্রথম এই ধারণা এনেছিলেন ইমতিয়াজ কাশেম। এটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা ‘২০১০ সালের দিকের ঘটনা। পেট্রিক স্মিথ নামে এক আমেরিকান যুবক থাইল্যান্ড বেড়াতে এসে বিয়ে করে থেকে যান। সেই লোকটার একটি ব্লগ ছিলো। যেখানে প্রথম দেখতে পাই ট্যাক্সি সার্ভিসে মিটার বসানোর কথা। একটি মিটারও ওই লোক বানিয়ে ফেলেছিলেন। অ্যাপের মাধ্যমে মিটার তৈরি তখনও কেউ চিন্তা করেনি। সেই লোকটি থাইল্যান্ডের ট্যাক্সিতে মিটার বসাতে চেয়েছিলো। ‘মটো মিটারস’নামে ছিল সেই মিটার।

বিজ্ঞাপন

ইমতিয়াজ কাশেম মাত্র ২০টি মিটার বাংলাদেশের ট্যাক্সিতে লাগিয়ে দিয়ে ছাড়ার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এজন্য থাইল্যান্ডে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে কথা বলে এসেছিলেন। একেকটি মিটারের দাম ১৫০ ডলার করে চেয়েছিলেন পেট্রিক স্মিথ। তারপর দিচ্ছি-দেবো বলে সেই লোকটি আর মিটার বানিয়ে দিতে পারেননি।

ইমতিয়াজ বলেন, একই সময় আমার মনে হলো- আমি নতুন করে ট্যাক্সি কিনবো না। ঢাকায় এত শত মোটরসাইকেল চলছে তার প্রত্যেকটিতে একটি করে মিটার লাগিয়ে দিলেই তো হয়।

এর মধ্যে আমেরিকায় উবারের ট্যাক্সি সেবা শুরু হয়ে যায়। তারা আমেরিকাতেই ব্যাপক চাহিদা তৈরি করে ফেলে। ঢাকা অনেক মোটরসাইকেল চলছে যেগুলোর পেছনের সিটে কেউ নেই-এটা দেখেই মনে হলো বাংলাদেশে এমন একটা অ্যাপ চালু করি যাতে মোটরসাইকেলে একজনের সঙ্গে আরেকজন যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানলাম শুধু ঢাকা শহরে চার লাখের ওপর মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন আছে। তারপর মোটরসাইকেলগুলোতে অ্যাপের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে সাথে নিয়ে যাওয়ার অ্যাপটি চালুর চিন্তা করি। সেসসময় যাকেই এটা বলেছি সে এটাকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলো।

তিনি বলছিলেন, ‘এটা করার পেছনে উদ্দেশ্য ছিলো- দ্রুত সময়ে কম খরচে মানুষের গন্তব্যে পৌঁছানো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এটা একটা পেশা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে দাঁড়ালে তার ক্ষতিকারক দিকও বের হয়েছে। নতুন করে মোটরসাইকেল বিক্রি বেড়ে গেছে। আমি কিন্তু চেয়েছিলাম নতুন কোন মোটরসাইকেল নয় যা আছে তা দিয়েই রাইড শেয়ারিং হবে।

এর এখন এটা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বাড়তি ভাড়া থেকে নামিয়ে খরচের সমান ভাড়া ঠিক করে দিলেই নিয়ন্ত্রণের এসে যাবে।

সারাবাংলা/এসএ/একে

মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর