Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্ণফুলী পাড়ে উচ্ছেদ: ভাঙা হচ্ছে ছাপড়া থেকে বহুতল ভবন


৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৪৫

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে কর্ণফুলী নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রথমদিনের অভিযানেই বুলডোজারের আঘাত পড়েছে ছাপড়া ঘর থেকে শুরু করে প্রভাবশালী শিল্পপতির অবৈধ বহুতল ভবন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটে লাইটার জেটি এলাকায় অবস্থান নেয় উচ্ছেদকারী দল। বুলডোজার, পে-লোডার, অগ্নিনির্বাপক গাড়িসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম আগেই প্রস্তুত রাখা হয়।

জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত ও তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বে সকাল সোয়া ১০টা থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম।

তাহমিলুর রহমান মুক্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদীর পাড়কে আমরা কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করেছি। প্রথম ধাপ হচ্ছে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত। এই এলাকায় প্রায় ২০০ অবৈধ স্থাপনা আছে। সেগুলো উচ্ছেদ করতে পারলে ১০ একর ভূমি উদ্ধার হবে।’

তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের পর ধাপে ধাপে আরও দু’টি পয়েন্টে কাজ শুরু করব। সেগুলো হচ্ছে- বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পতেঙ্গা এবং সদরঘাট থেকে চাক্তাই। প্রতিদিন উচ্ছেদ কার্যক্রম সকালে শুরু হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুর রহমান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রথম দফায় লাইটারেজ জেটি এলাকায় ‘সদরঘাট সাম্পান চালক সমবায় সমিতি’ নামে একটি সংগঠনের অবৈধ কার্যালয় ও অবৈধভাবে গড়ে তোলা যাত্রী ছাউনি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি অবৈধ লোহার স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি কয়েকটি ছাপড়া ঘরও ভেঙে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর অভিযান শুরু হয় পাশের কর্ণফুলী ঘাট এলাকায়। সেখানে নদীপাড় দখল করে গড়ে তোলা কয়েকটি টিনের ছাপড়া ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। এসময় সেসব ঘরে বসবাসরতদের দ্রুত আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।

বসবাসরতদের একজন তোতা মিয়া সারাবাংলাকে জানান, তারা লাইটার জাহাজ ও নৌকায় পণ্য উঠানামা করেন। শ্রমিক সরবরাহকারী মালেক মাঝির অধীনে তারা কাজ করেন। তোতা মিয়ার বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। মালেক মাঝি ছাপড়া ঘর বানিয়ে তাদের সেখানে থাকতে দিয়েছে বলে তিনি জানান।

এরপর দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় আলোচিত শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. রশীদের মালিকানাধীন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদকারী দল সেখানে পৌঁছানোর আগেই লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি করা অবৈধ স্থাপনা তারা নিজেরাই সরিয়ে নিচ্ছে। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ফেলা হয় লোহার পিলার। সরিয়ে নেওয়া হয় আসবাবপত্র। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা সবুজ রশি দিয়ে নিজেরাই তাদের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কাছ থেকে রশি কেড়ে নেন। সঙ্গে সঙ্গেই বুলডোজার দিয়ে পাকা ও লোহার স্থাপনার আরও কিছু অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, ১৯৯৪ সালে জেলা প্রশাসন থেকে দশমিক ৫৩২১ একর খাসজমি লিজ নেওয়া হয়। এরপর তারা একটি কোল্ড স্টোরেজ গড়ে তুলেন সেখানে। আর নদীর তীরবর্তী ৮৪ ফুট ৯ ইঞ্চি পাড়ের জায়গা ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়। সেখানে ২০১০ সালে গড়ে তোলা হয় ছোট জেটি।

বিজ্ঞাপন

কোল্ড স্টোরেজ এবং জেটির মাঝামাঝি জায়গা দখলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘জাহাজ থেকে মালামাল নামিয়ে ট্রাকে তোলার জন্য জায়গাটা আমরা ব্যবহার করতাম। তবে আমরা কোন স্থায়ী স্থাপনা এখানে বানাইনি। জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়ার পর আমরা নিজেরাই সরিয়ে নিয়েছি।’

উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনে যাওয়া চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, আরএস অনুযায়ী যদি সীমানা কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের মূল ভবনের মধ্যে পড়ে, সেই অংশও ভেঙে দেওয়া হবে।

কর্ণফুলীতে উচ্ছেদ শুরুর পর ‘হুমকি পাচ্ছেন’ ডিসি

এদিকে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের অবৈধ স্থাপনা আদৌ ভাঙা হবে কি না, এমন গুঞ্জন ছিল স্থানীয়দের মধ্যে। সেখানে উচ্ছেদ শুরুর আগে থেকেই একজন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতাকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। পরে ওই যুবলীগ নেতা গিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কথা বলেন। এছাড়া সেখানে উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জসিম উদ্দিন নামে এক যুবককে আটক করা হয়।

দুপুরে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম দেখতে যান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর আক্তার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে নদীপাড়ে এরকম বন্দরের অনেক জায়গায় জাহাজ ভিড়তে পারবে। মালামাল লোড-আনলোডের কাজ হবে। দৃষ্টিনন্দন হবে। জাহাজের নাবিকরা এখানে বসতে পারবে।’

অবৈধভাবে ভূমি দখল করায় কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ইজারা বাতিল করা হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী নিয়মের মধ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা সবসময়ই ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমাদের ভূমিতে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করি। এটা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।’

উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আরও কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ফায়ার সার্ভিস, কণর্ফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, র‌্যাব-পুলিশ।

তাহমিলুর রহমান মুক্ত জানান, জেলা প্রশাসনের নিযুক্ত ১০০ জন শ্রমিক উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে জানান, উচ্ছেদ অভিযানে ১৮০ জন পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের ২০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাব সদস্য আছেন ৬০ জন।

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, তাদের ৪টি ইউনিটের ৪টি গাড়ি এবং ২৭ জন ফায়ারকর্মী সার্বক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ৫০ জনের টিম উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৫ সালের জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত তিন বছরে স্থাপনা আরও বেড়েছে বলে ধারণা জেলা প্রশাসনের।

সারাবাংলা/আরডি/আরএ/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর