সেকান্দরের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:০১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে একুশে টিভির প্রধান প্রতিবেদক এম এম সেকান্দরের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে একুশে টিভি পরিবার ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।
সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘একুশে পরিবারে’র ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সংবাদকর্মীরা ‘নারীর জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ চাই’, ‘যৌন নিপীড়কের শাস্তি চাই’, ‘সিকান্দর ও তার সহযোগীসহ সব যৌন নিপীড়কের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ধারণ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ইটিভির নিউজরুম এডিটর আফসানা নীলা বলেন, ‘ইটিভিতে কাজ করে গর্বিত ছিলাম, এখনও আছি। কিন্তু আমাদের পরিবারের একজনের বিরুদ্ধে এসে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। যেহেতু অন্যায় করেছেন, নিয়ম অনুযায়ী বিচার চাইতে পারি। এতদিন অফিশিয়ালি চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সমাধান পাইনি। নিউজরুমে বিয়ষটি সমাধান না হওয়া মামলা হয়েছে। এখন তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। আমরা অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
নীলা বলেন, ‘একুশে টিভির সুনাম নষ্ট হোক, এটা আমরা কোনোভাবেই চাই না। আমরা সেটা হতে দিতে পারি না।’ এসময় কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নীলা। তিনি বলেন, ‘ইটিভি আমাদের অনেক ভালো লাগার জায়গা। নানা পরীক্ষা ও ভাইভা দিয়ে এখানে এসেছি। কারও পায়ে হাত রেখে এখানে আসিনি। আমরা চাই না আর কেউ তার সহকর্মীর হাতেই হেনস্তা হোক। আমরা আমাদের গায়ে নষ্ট কিছু লাগাতে চাই না। সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
উইমেন নিউজের সম্পাদক আইরিন নিয়াজী মান্না বলেন, ‘যৌন নিপীড়ক সেকান্দরের শাস্তি চাই। মিডিয়াতে কোনো জানোয়ারের স্থান হোক, এটা আমরা চাই না। বর্তমানে মেয়ের মুখ খুলছে। এটা ইতিবাচক। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
সাংবাদিক রওশন ঝুনু বলেন, মিডিয়াতে যেসব নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, যখন তারা মুখ খুলতে শুরু করেছে, তখনও তাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায় যৌন হেনস্তা। নারীদের পিছিয়ে রাখার জন্য যৌন নিপীড়ন করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যেন আমাদের আর কোনোদিন রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়।
সংবাদকর্মী সুমন শামস বলেন, ইটিভির বর্তমান কর্মকাণ্ডে একুশ শব্দটি কলঙ্কিত হচ্ছে। একজন পুরুষ হিসেবে, ইটিভির একজন সাবেক কর্মী হিসেবে, একজন সাংবাদকর্মী হিসেবে আমি লজ্জিত। একুশ শব্দের মানে যে কলঙ্কিত হচ্ছে, নারীরা কলঙ্কিত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বিচার দিতে চাই। পচা মানুষ দিয়ে ভালো কিছু করা যাবে না। প্রতিটি মিডিয়াতে নারীদের লোভ দেখানোর কাজ চলে। এই লোভ দেখানো বন্ধ করা হোক। সব টিভি বা মিডিয়াতে মিটু নিয়ে পৃথক সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার করা হোক। আর তা একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমেই চালু হোক, আমরা তা চাই।
সিনিয়র সাংবাদিক কাজী রফিক বলেন, এ ঘটনা শোনার পর থেকে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। আমরা মিডিয়াতে সমাজকে বদলে দেওয়ার কথা বলি, সমাজ পরির্তনের কথা বলি। অথচ আমাদের দ্বারাই একজন নারী সহকর্মী হেনস্তার শিকার হবেন, তা হতে পারে না। সাধারণ মানুষের চেয়ে এক্ষেত্রে মিডিয়াকর্মীদের আরও বেশি শাস্তি হওয়া উচিত। এ ঘটনায় সিনিয়র সাংবাদিক ও ইউনিয়নগুলোকে আরও সোচ্চার হতে হবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইটিভির সিনিয়র নিউজরুম এডিটর মুশফিকা নাজনীন, নিউজরুম এডিটর মাসুমা লিসা, রিপোর্টার জুবায়ের খুকু, প্রণব চক্রবর্তী, জসিম জুয়েল, স্মৃতি মণ্ডলসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর