Monday 12 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তাঁতীদের মূলধন জোগাবে সরকার


৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৫ | আপডেট: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:৫২

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: তাঁত শিল্প দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ হলেও দেশের বিপুল পরিমাণ তাঁত এখন বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। আর এর মূল কারণ হলো চলতি মূলধনের অভাব। সে কারণেই জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ও তাঁতীদের জন্য মূলধন সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে তাঁতের আধুনিকায়নও করা হবে। এ জন্য ‘তাঁতীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চলতি মূলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তাঁত শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কৃষির পর পরই তাঁতের অবস্থান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁত শিল্প বিশেষায়িত ও প্রযুক্তিগতভাবে উচ্চ মূল্যের কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। কম মূল্যে উৎপাদিত পণ্য ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বেনারসি, জামদানি, মসলিন, টাঙ্গাইল শাড়ি ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় পণ্য। বিশেষায়িত, কেন্দ্রীভূত ও বাজার কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম এ শিল্পের  অনন্য বৈশিষ্ট্য।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রণালয় বলছে, তাঁত শিল্প থেকে বছরে প্রায় ৬৮ কোটি মিটার তাঁত বস্ত্র উৎপাদিত হয়, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ পূরণ করে থাকে। দেশের জাতীয় অর্থনীতে এ শিল্প থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এই শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৯ লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরও প্রায় ৬ লাখ মানুষ যুক্ত। তাই বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।

মন্ত্রণালয় বলছে, তাঁত শিল্পের উৎপাদনে বেশি শ্রম শক্তি প্রয়োজন হলেও মূলধন লাগে অল্প। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সর্বশেষ ২০১৭ সালের তাঁত শুমারি অনুযায়ী, ১ লাখ ২৯ হাজার ৮১৫টি তাঁত বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। শুমারিতে এসব তাঁতের ৭৯ শতাংশ বন্ধ থাকার কারণ উঠে এসেছে চলতি মূলধনের অভাব। এছাড়া, ১২ শতাংশ সুতার অভাব, ২ শতাংশ শ্রমিক সমস্যা ও ৫ শতাংশ বিক্রয়জনিত অন্যান্য সমস্যার কারণে বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে শুমারিতে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য তাঁতের আধুনিকায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড পরিচালিত তাঁত জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমান ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫টি তাঁত এবং ৬ লাখ ১০ হাজার ৯০৩ জন তাঁতী রয়েছে। পরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৮ সালের মে মাসে তাঁত শুমারি ২০১৮ বাস্তবায়ন করেছে। তবে সমীক্ষা চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনও ফল পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রকল্পের এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় তাঁতীদের মধ্যে তাঁত ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, তাঁত শিল্প ও তাঁতীদের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ১৯৯৬ সালের তাঁত শিল্পের ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া শুরু হয়, এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, তাঁতীদের মধ্যে ঋণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, তথা গ্রামীণ তাঁতীদের তাদের নিজস্ব পেশায় টিকিয়ে রাখার জন্য, সর্বোপরি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির টেকসই উন্নয়নের জন্য তাঁতীদের প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন সরবরাহসহ তাঁতের আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তাঁতীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং তাঁত শিল্পের উন্নয়নের ফলে এ খাতের উৎপাদন বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর