মমতার ধর্মঘট চলছে, সুপ্রিম কোর্টে শুনানি
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:২২
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের তল্লাশি চেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতে মমতা বনাম কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যকার এই বিরোধ দেশজুড়ে টালটামাল অবস্থা সৃষ্টি করেছে। পুরো সোমবারজুড়ে (৪ ফেব্রুয়ারি) এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করেছে। নিজের ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মমতা। টানা তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘট পালন করছেন তিনি।
দুই পক্ষের এই বিরোধে মমতার পক্ষে গড়ে ওঠেছে বিরোধী জোট। মমতার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে, বিজেপি বিরোধী দলগুলো। সে জোটের ক্ষিপ্রতা পৌঁছেছে পার্লামেন্ট পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধোনা করেছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন- ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘটে মমতা
প্রসঙ্গত, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তার তদন্তাধীন দু’টি মামলার প্রমাণ নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) সিবিআই তার বাড়িতে তল্লাশির চেষ্টা চালায়। তবে স্থানীয় পুলিশের বাঁধায় তল্লাশি সম্ভব হয় না সিবিআইয়ের পক্ষে। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট করছেন মমতা। শুরুতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দিলেও সোমবার এক বক্তব্যে মমতা ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেন। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হবে বলেই এর আগে কর্মসূচি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানি
এদিকে তল্লাশি চালাতে না পেরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব, রাজ্যের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ প্রধান রাজীব কুমার সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অগ্রাহ্য করে চলেছেন।
রাজীব কুমার যাতে তদন্তে সিবিআইকে সহযোগিতা করেন, সেই মর্মে শীর্ষ আদালতকে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেছে সিবিআই।
সিবিআই-এর আবেদনে সাড়া দিয়ে এই মামলা দ্রুত শুনতে রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ মামলা শুনবে মঙ্গলবার।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবারের শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেন যে, রাজ্য সরকারের তরফে গঠিত এসআইটি প্রধান হিসেবে রাজীব কুমার প্রচুর সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন৷
তার দাবির জবাবে গগৈ তাকে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ জমা দিতে বলেন।
গগৈ বলেন, যদি কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুদূর পরিকল্পনাতেও সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করার কথা ভেবে থাকেন, তা হলে তার পক্ষে প্রমাণ হাজির করুন আদালতে৷ আমরা এমন শাস্তি দেব ওঁকে, যে উনি অনুশোচনা করবেন৷’
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে হবে মামলার পরবর্তী শুনানি।
রাজীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সিবিআই অভিযোগ করেছে যে, রাজীব কুমার কলকাতা পুলিশ প্রধান হিসেবে সারধা ও রোজ ভ্যালি পঞ্জি সরকারি পরিকল্পনায় সম্ভাব্য অপরাধী। উভয় ঘটনাই তিনি তদন্ত করেছেন। সিবিআইয়ের দাবি, এমনটা সম্ভব যে, রাজীব ঘটনাগুলোর সংশ্লিষ্ট তদন্ত নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
সারধা কেলেঙ্কারি
সারধা কেলেঙ্কারি ছিল একটি ব্যাপক আকারের অর্থনৈতিক জালিয়াতি। এতে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারীকে উচ্চ লাভের প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারধা গ্রুপ। এক সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, সব মিলিয়ে সারধা কেলেঙ্কারিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি রুপি আসে এর চিটফান্ড দিয়ে। তবে অনেকে দাবি করেছেন মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি। অর্থ জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর সিবিআইকে ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন সুপ্রিম কোর্ট।
রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারি
রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারির মাত্রা সারধা কেলেঙ্কারির চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অনুসারে, এই কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন অর্থ জমাকারীর কাছ থেকে ১৫ হাজার কোটি রুপি নিয়েছে রোজ ভ্যালি গ্রুপ। এসব অর্থের বেশিরভাগই জমা হয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহার থেকে।
ইডি অনুসারে, এই অর্থ রাজনীতিবিদদের ঘুষ দিতে ব্যবহৃত হয়েছে। যাতে করে পরিকল্পনাটি কোন বাঁধা ছাড়াই চালানো যায়।
দুটি কেলেঙ্কারিই তদন্ত করেছিলেন রাজীব কুমার।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বনাম বিরোধীদলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সাম্প্রতিক এই ঘটনায়। এটা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। (এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবলম্বনে)
সারাবাংলা/ আরএ