ইলেকট্রিক গাড়ির যুগে বাংলাদেশ, নতুন বিধিমালায় হবে অনুমোদন
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:৪৩
।। সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: লন্ডন থেকে টেসলা কার কিনে দেশে এনেছেন এক শিল্পপতি পরিবার। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় বিলাবসবহুল দামি এ গাড়িটি দুই বছর ধরেই তাদের বাড়িতে বসে আছে। এর মধ্যে কয়েকবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএতে নিয়ে গিয়েও ফেরত আনতে হয়েছে। কারণ হিসেবে বিআরটিএ বলছে, ইঞ্জিন ছাড়া ইলেকট্রিক মাধ্যমে চলে— এমন কোনো গাড়ির অনুমোদনই তারা দেয় না। শুধু ইলেকট্রিক কার নয়, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা বা ইজিবাইকেরও অনুমোদন নেই। একইভাবে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলও দেশে আমদানি হলেও চলছে অনুমোদন ছাড়াই।
জানা গেছে, দুই বছর ধরে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির বাইরে ব্যাটারিচালিত বা ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য একটি নীতিমালা করার চেষ্টা করছে সরকার। শেষে নীতিমালা নয়, বিধিমালার আলোকে এসব গাড়ির অনুমোদন দিতে চায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ইলেকট্রিক গাড়ি, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলের অনুমোদন দিতে নতুন এ সিদ্ধান্ত যাচ্ছে বিআরটিএতে।
এর আগে, বিআরটিএ’র একটি কমিটি ইলেকট্রিক গাড়ির অনুমোদনের জন্য নীতিমালা প্রস্তাব পাঠিযেছিল মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করে এখন বিধিমালার আলোকে অনুমোদন দিতে চাচ্ছে।
বিআরটিএ’র পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানী সারাবাংলাকে জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত— বিধিমালার আলোকে এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হবে। দেশে যত গাড়ি বৈদ্যুতিক চার্জে চলবে, সবগুলো এর অন্তর্ভুক্ত।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিধিমালা প্রস্তুত করতে একটি প্রতিনিধি দল ভারত যাবে। সেখানে কিভাবে এ গাড়িগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়, এগুলো তারা দেখে এসে প্রতিবেদন দেবে। এর আলোকে বিধিমালা প্রস্তুত হবে।
জানা গেছে, ইলেকট্রিক গাড়ি দেশে অনুমোদন দিতে প্রক্রিয়া শুরু হয় দুই বছর আগে। তখন ডন এন্টরপ্রাইজের আনা একটি ইলেকট্রিক গাড়ি বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়, বুয়েট ও বিআরটিএ’র সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এহসান বিশেষজ্ঞ হিসেবে এ কমিটিতে ছিলেন।
যোগাযোগ করলে ড. এহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো বৈদ্যুতিক শক্তি লাগবে। এখন দেশের বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন সক্ষমতা আছে কি না, সেটা আগে দেখতে হবে। কারণ গাড়িটি পুরোপুরি বিদ্যুৎ-নির্ভর। কোথাও চার্জ দেবেন, তারপর সেটা চলবে। সেক্ষেত্রে যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন তা উৎপাদনের জন্য দেশ প্রস্তুত কি না, সেটা দেখতে হবে।’
বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, দেশে এরই মধ্যে কয়েক লাখ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি চলছে। সরকারিভাবে এগুলো অনুমোদিত নয়। এ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের বিদুৎচালিত গাড়ি অধ্যুষিত বড় জায়গা।
তার তথ্য অনুযায়ী, কেবল ঢাকার আশপাশের জেলায় কয়েক লাখ এবং সারাদেশে বিদুৎচালিত গাড়ির সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ লাখ। এই গাড়িগুলোর একটিও সরকার অনুমোদিত না। বৈদ্যুতিক গাড়ির অনুমোদন দিলে এই কয়েক লাখ গাড়ির অনুমোদনের ব্যাপারটিও সামনে চলে আসবে বলে মনে করেন অধ্যাপক মো. এহসান।
বিশ্বে যেসব দেশ ইলেকট্রিক গাড়ি নির্ভরতার দিকে যাচ্ছে, তারা আগে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে তাদের সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত করেছে। তারপর ইলেকট্রিক গাড়ি শুরু করেছে বলেও জানান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো এহসান।
এদিকে, ইলেকট্রিক গাড়ির অনুমোদনের বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক সাইফুল চৌধুরী সারাবাংলকে বলেন, ‘ইজিবাইকসহ বিদুতে চালিত যেকোনো গাড়ির অনুমোদন দিতে চায় সরকার। রাজনৈতিক কারণেও এগুলো অনুমোদন দিতে হচ্ছে। এজন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আলাদা কয়েকটি চার্জিং স্টেশন করেছে। আবার কেউ বাসাবাড়িতে বা অন্য কোথাও চার্জ দিলে তার জন্যও নির্ধারিত ট্যারিফ ঠিক করা হয়েছে।’ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এ বিষয়ে ইতিবাচক থাকায় এগুলোতে এখন আর বাধা না দিয়ে বরং পরিবেশবান্ধব হিসেবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকাসহ সারাদেশে শুধু ইজিবাইক নয়, আমদানি করে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলও আনা হচ্ছে। বিধিমালা হলে বাড়বে ইলেকট্রিক কারের আমদানি।
প্রোগেস মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ নুসরাত খান সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে এখনও ইলেকট্রিক কোনো কার রিলিজ হয়নি। ব্র্যান্ড অথরাইজ ডিলারশিপ হিসেবে তারা ফুল কমপ্লায়েন্সসহ বিক্রি করেন। এর মধ্যে ব্যাংক লোন ও বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। যে কারণে রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ইলেকট্রিক গাড়ি আসছে না।
সাদ নুসরাত মনে করেন, নীতিমালা বা বিধিমালা যদি সাধারণ আকারে করে দেওয়া হয়, তাহলে প্রচুর ইজিবাইক ও চীন থেকে নিম্নমানের ইলেকট্রিক গাড়ি ঢুকে যেতে পারে। এতে প্রচুর বৈদ্যুতিক চার্জ লাগবে, যা জাতীয় গ্রিডে প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু প্রাইভেট কার বা বাসের ক্ষেত্রে এই অনুমোদন দেওয়া হলে বড় ধরনের বৈদ্যুতিক চাপ পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
সারাবাংলা/এসএ/টিআর