Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ ঢাকা


৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:১৫

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশংসনীয় কাজ করলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে মনে করেন কূটনীতিক, শিক্ষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এই সংকট থেকে চরমপন্থা, সন্ত্রাসসহ উগ্রপন্থী একাধিক গোষ্ঠীর জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।  মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলবে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের সহায়তায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে কানাডিয়ান হাইকমিশন অব বাংলাদেশ।

ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (আইপিএজি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মুনীর খসরুর সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রে।  এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এএনএম মুনিরুজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, রাজা দেবাশীষ রায় ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন প্যানেল আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, একাধিক দেশের কূটনীতিক, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক।  আজ হোক, কাল হোক, তাদের সেখানেই ফিরে যেতে হবে। তবে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট একটি আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে চলেছে। যার দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রভাব এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর পড়বে।  নিরাপত্তা ও কৌশলগত বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্যোগ এখনো প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: এই আচরণের জন্য আমরা লজ্জিত: অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

বব রে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের বিচিত্র দিক রয়েছে। তা একইসঙ্গে জটিল ঐতিহাসিক, ভৌগলিক ও আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফল।  কর্তৃত্ববাদী শাসন, ধর্মীয় নিধন ও প্রাকৃতিক সম্পদ এই সংকটের বিভিন্ন প্রবণতা তৈরি করেছে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদসমৃদ্ধ ভূমি দেশটির ক্ষমতার প্রধান অংশীদার সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক স্বার্থগোষ্ঠীর বহুমুখী প্রতিযোগিতা এই সংকটকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে। ফলে, তাতে রোহিঙ্গা সংকট একটি আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে চলেছে। ’

‘বর্তমান ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষিতে মায়ানমার সুবিধাজনক অবস্থানে আছে’, বলে মন্তব্য করে বব রে বলেন, ‘দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করায় তারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দূরবর্তী অবস্থানে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলো মায়ানমারের রিরুদ্ধে কোনো দৃঢ অবস্থান নিতে পারছে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সুরাহার পথ খোঁজা প্রয়োজন।  এই আলোচনার জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

বব রে আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বললে বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়।  তবে এই সংকট সমাধানের জন্য স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধানের পথও খুঁজতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, টেকসই  ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।  আবার, একই সঙ্গে শরণার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন তারা কট্টরপন্থা কিংবা সন্ত্রাসবাদের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পড়ে।’

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এএনএম মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর এক বছর পার হয়েছে, কিন্তু সমাধানের পথে আমরা বিশেষ এগুতে পারিনি। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা আমাদের জন্য নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে। বিশেষত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের মধ্যে তাদের সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।’

রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সুশীল সমাজের মধ্যে সংলাপ ও আলোচনা কার্যকরী হতে পারে।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অতীতে আমরা মায়ানমারের দিকে বিশেষ নজর দেইনি।  রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য পাঁচ-দশ বছরও লেগে যেতে পারে।  যেহেতেু এটি একটি আঞ্চলিক সংকট, ফলে তা নিরসনের ক্ষেত্রে একমাত্র চীনই আমাদের সহায়তা করতে পারে। ’ চীনের সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক সহায়তায় তা সম্ভব না হলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো যেমন জাপান, কিংবা আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রর সাহায্যে তা করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএনএইচ

বাংলাদেশ মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকট

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর