Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এবার হেলিকপ্টার স্কোয়াডের আবদার পুলিশের


৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:২০

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজস্ব মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সে দাবি পূরণের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেলিকপ্টার স্কোয়াডের দাবি জানিয়েছে পুলিশ। কর্মকর্তারা বলছেন, এই স্কোয়াড হলে সব ধরনের সক্ষমতা অর্জন করবে পুলিশ।

অবশ্য কেবল হেলিকপ্টার স্কোয়াডই নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পুলিশের দাবির তালিকায় রয়েছে জেলায় জেলায় পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ স্থাপন, বিদেশি মিশনে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন, ওভারটাইম চালু, মাদক উদ্ধার অভিযানে পুলিশ সদস্যদেরও আনুপাতিক হারে অর্থ পাওয়ার মতো সুযোগ-সুবিধাও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন, পুলিশ বাহিনীর জন্য সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়বে।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ সুপার ও  সমমান পদমর্যাদাসহ ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মতবিনিময়ের সময় পুলিশ কর্মকর্তারা এসব দাবির কথা জানান। মতবিনিময় শেষে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বেশ কয়েকজন ডিসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়ে তাদের বক্তব্যে কমপক্ষে ১০টি হেলিকপ্টার কিনে পুলিশের একটি স্কোয়াড গঠনের দাবি জানান। রাজশাহী ও রংপুর রেঞ্জের বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হেলিকপ্টার স্কোয়াড গঠন করা হোক। এটি গঠন হলে পুলিশ সব ধরনের সক্ষমতা অর্জন করবে।

বিজ্ঞাপন

ডিএমপির আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পর অর্থ পান। মাদকদ্রব্য উদ্ধারে যেন পুলিশ সদস্যরাও সমানুপাতিক হারে অর্থ পেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ সদস্যদের সন্তানদের জন্য প্রতিটি জেলায় পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ স্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দিতে হবে। এসব স্কুল স্থাপন হলে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষার্থীদেরও উচ্চ শিক্ষার জন্য পথ সুগম হবে।

অনুষ্ঠানে ডিআইজি পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশি মিশনগুলোতে পুলিশ সদস্য পদায়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, এতে করে পুলিশের মর্যাদা আরও বাড়বে। এয়ারপোর্ট এপিবিএনে ৪৬০ জন সদস্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে সদস্য বাড়ানোর প্রস্তাবও করেন তিনি।

আরেক ডিআইজি বলেন, ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে প্রতি ঘণ্টা হিসেবে ওভারটাইম ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে পুলিশ সদস্যরা আরও বেশি কাজ করতে উৎসাহিত হবেন। বরিশাল রেঞ্জের একজন উপকমিশনার বলেন, জেলা পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কোনো ভাতা পায় না। তাদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা রেঞ্জের একজন পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করে বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে অনুষ্ঠানের সময় পুলিশের আইজি স্যার রিসিপশনে থাকতে পারেন না। অথচ বাহিনী প্রধান হিসেবে অন্য সবাই উপস্থিত থাকেন। এখন থেকে যেন পুলিশ বাহিনীর পক্ষে আইজিপি স্যার রিসিপশনে উপস্থিত থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা ও খুলনা রেঞ্জের দুজন পুলিশ সুপার তাদের দাবিতে বলেন, ডিও লেটারের মাধ্যমে ওসি নিয়োগ বাতিল করতে হবে। পুলিশের অর্জিত ছুটি না দিলে ছুটির পরিবর্তে টাকা দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা ওসি নিয়োগের বিষয়ে বলেন, বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরের ডিও লেটারের মাধ্যমে ওসি নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে একজন ওসিকে থানা থেকে দুই বছরের আগে বড় কোনো অভিযোগ ছাড়া সরানো যায় না। সরাতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আর ডিও লেটার প্রথা উঠিয়ে দিলে পুলিশ সুপাররা যখন তখন ওসিদের এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি করাতে পারবেন। এমনকি ওএসডিও করতে পারবেন বলে জানান একজন ওসি।

এদিকে, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদের জন্য আলাদা ভাতা দেওয়ার দাবি জানান।

পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি-দাওয়া জানানো শেষ করলে পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, আপনাদের সব দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। আপনাদের প্রতি আমার দাবি, এখন থেকে কোনো পুলিশ সদস্য মাদক বিক্রি বা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না। মাদকের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদের অধীনে যারা কাজ করেন, তাদেরও সতর্ক করবেন। মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পুলিশ সদস্যদের বলেন, পুলিশের সব দাবি তো প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। এরপর আর কোনো দাবি থাকতে পারে না। এখানে নতুন দাবির মধ্যে হেলিকপ্টারের কথা শুনলাম। ১০ বছর আগে আজকের বাংলাদেশ ছিল না। আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ বাংলাদেশ নিরাপদ বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। তাই পুলিশের সব ধরনের সক্ষমতা বাড়াতে সবকিছু করা হবে। হেলিকপ্টার যদি বহরে যোগ করতে হয়, সেটাও করা হবে।

তিনি বলেন, সময়ের পরিক্রমায় চাহিদা অনুযায়ী সবকিছুর ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশের যেখানে যেখানে জনবল দরকার, তা চিহ্নিত করেন, অচিরেই সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপনারা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন বলেই বাংলাদেশ আজ নিরাপদ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৮ সালের পুলিশ আর ২০১৯ সালের পুলিশ এক নয়। এখনকার পুলিশ অনেক উন্নত ও প্রশিক্ষিত। তবে আরও বেশি উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। এখন থেকে পুলিশের তিন স্তর বিশিষ্ট কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে একাডেমিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এটা কাজে দেবে। শিল্প পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কারণ জেলা পুলিশকে গিয়ে অনেক সময় পরিস্থিতি সামলাতে হয়।

দুর্নীতি ও ঘুষের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে আসাদুজ্জাম খাঁন কামাল বলেন, সবার বেতন বাড়ানো হয়েছে, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে। এখন পুলিশের কাছে এখন চাওয়া হচ্ছে— দুর্নীতি করা যাবে না, ঘুষ খাওয়া যাবে না।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল হেলিকপ্টার স্কোয়াড

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর