দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণপূর্তমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:২৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: মন্ত্রণালয় ও রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কাজ করতে হলে শতভাগ সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুবা সরে যেতে হবে। আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জায়গা হবে জেলখানা। আমি মনে করতে চাই, আমার মন্ত্রণালের কেউ অসৎ নয়, বাস্তবেও যেন তার প্রতিফলন ঘটে।
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা চাই, আইন ও নিয়ম অনুসরণ করুন, অনুমোদিত পরিকল্পনার আলোকে পরিবেশবান্ধব ইমারত নির্মাণ করুন।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি নূরন্নবী চৌধুরী শাওন ও প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আবাসন খাতের কোনো কোনো কোম্পানি খাতটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলে। দেখা যায়, তারা কমন স্পেস রাখে না, অনুমোদিত প্ল্যানের বাইরে গিয়ে ওয়ার্কিং প্ল্যান নামক একটি শব্দ ব্যবহার করে ছোট্ট ছোট্ট খোপের মতো করে ফ্ল্যাট তৈরি করে। এতে গ্যারেজও থাকে না। রাস্তা বন্ধ রেখে আনকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরি করছে। ইনস্পেকশন শুরু হলে এসব ভবন ভেঙে দেওয়ার জন্য আমরা ব্যবস্থা নেই। যারা স্বল্প টাকায় এসব ফ্ল্যাট কিনলেন বা বাড়ির মালিক হলেন, তারা তো অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। তারা কিন্তু টেকনিক্যাল লোক না, তারা জানেনও না তাদের টাকায় কেনা ফ্ল্যাটটি যথাযথভাবে নির্মিত হয়নি। আর তাদের অসহায় অবস্থার মধ্যে যারা ফেলে গেলেন, সেই নির্মাতাদের খোঁজ কিন্তু পাওয়া যায় না। এ সংক্রান্ত আইনও এত অপ্রতুল যে এদের ধারও কঠিন, পাওয়াও কঠিন। আবার যখন প্ল্যানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সেটিও কিন্তু আমাদের কিছু কিছু কর্মকর্তার চোখে পড়ে না।
মন্ত্রী বলেন, ব্যবাসয়ীদের কাছে আমার দাবি থাকবে, আপনাদের সুন্দর কাজগুলোকে যারা বিতর্কিত করছে, যারা বিপন্ন করে তুলছে, তাদের চিহ্নিত করুন। কিছু কিছু খাত আছে, বাইরে যার বাজে একটি ইমপ্রেশন তৈরি হয়। ধরুন দু’জন লয়ার একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। বাড়ি আর ছাড়ছে না। বাড়ি ছেড়ে না দিয়ে উল্টো একটা মামলা ঠুকে দিচ্ছে। এর সংখ্যা দুই/চার জন। এজন্য বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে উকিল শুনলে অনেকেই চিন্তা করে ভাড়া দেওয়া ঠিক হবে কি না। একই উদাহরণ রয়েছে ম্যানপাওয়ার বিজনেসের ক্ষেত্রেও। কিছু কিছু ফ্রডদের কারণে ওই ব্যবসাকে বলে আদম ব্যবসা। এরকম কয়েকজন লোকের কারণে কিন্তু আইনজীবী বা ম্যানপাওয়ারের ব্যবসায়ীদের ভুগতে হয়। হাউজিং খাতেও এমন কিছু ব্যক্তি আছে, যাদের কাজকর্ম সাইনবোর্ড নির্ভর। এমন প্রতারক ব্যবসায়ীদের তথ্য দিতে রিহ্যাব নেতাদের আহ্বান জানান মন্ত্রী।
পূর্বাচলসহ অন্যান্য স্থানে জায়গা পেলে তাতে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রস্তাবের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানান গণপূর্তমন্ত্রী। বেসরকারি আবাসন খাতকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বোচ্চ সহায়তারও প্রতিশ্রতি দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মানুষ দু’টি ব্যবসাকে ভয় পায়— একটি ম্যানপাওয়ার, অন্যটি অসৎ ডেভেলপার। কাজ দিয়ে আপনাদের প্রমাণ করতে হবে আপনারা প্রকৃত ব্যবসায়ী। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এনবিআরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর নতুন ভ্যাট আইন চালু হবে। তারমানে এই নয় আপনাদের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে। তবে যেটুকু আরোপ করা হয়, আপনারা তা সঠিকভাবে পরিশোধ করবেন, যেন ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া না হয়।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জেনুইন ব্যবসা করেন, মানুষ আপনাদের প্রশংসা করবে। আল্লাহ সহায় হবেন, আমরা আপনাদের পাশে থাকব। অনুরোধ করব, যারা বাড়ি করেন, তাদের সব বিনিয়োগ, সারাজীবনের সঞ্চয় ব্যয় করে ফ্ল্যাট করেন। তাই আপনাদের কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হবে।
রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি নূরন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, সরকার যদি জমি দেয়, তবে আমরা ৪৫০ থেকে ৬০০ স্কয়ার ফুটের ছোট ছোট ফ্ল্যাট তৈরি করতে চাই। এখনও আবাসন খাতের নিবন্ধন ব্যয় ১৬ শতাংশ। কিন্তু তা যদি ৬ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, তবে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়বে।
পাঁচ দিনের রিহ্যাব মেলা শেষ হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। এবারের মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২০২টি স্টল রয়েছে। আর অংশ নিয়েছে ২০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৪টি অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলায় সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা ও মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকেট দিয়ে দর্শনার্থীরা মেলায় পাঁচ বার প্রবেশ করতে পারবেন। আর এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত অর্থ দুঃস্থদের সাহায্যে ব্যয় করা হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
এনবিআর চেয়ারম্যান গণপূর্তমন্ত্রী গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী রিহ্যাব শ ম রেজাউল করিম