Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিদিন হাজিরা এনবিআরে, খুঁজে পাচ্ছে না দুদক!


৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:২৩

।। শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন আর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের মূল তথ্য গোপনের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যার্পণ পরিদফতরের রাজস্ব কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মো. শহীদ খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাময়িক বরখাস্ত হলেও প্রতিদিনই ৩২, তোপখানা রোডের শুল্ক রেয়াত প্রত্যার্পণ পরিদফতরে হাজিরা দিতে হচ্ছে তাকে। অথচ দুদক বলছে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শহীদ খানকে। যদিও প্রত্যার্পণ পরিদফতরের মাত্র কয়েকশ গজ দূরেই অবস্থিত দুদক কার্যালয়!

বিজ্ঞাপন

শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যার্পণ পরিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা আপিল বিধিমালা ১৯৮৫ আইন অনুযায়ী, সাময়িক বরখাস্ত থাকলেও প্রতিদিন অফিসে উপস্থিত হতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কোনো দায়িত্ব পালন না করলেও অফিসের পুরোটা সময় তাকে থাকতে হয় অফিসেই। সেই অনুযায়ীই প্রতিদিন প্রত্যার্পণ পরিদফতরে হাজির হচ্ছেন মো. শহীদ খান। কিন্তু নিজেদের মামলার এই আসামিকে নাকি খুঁজেই পাচ্ছে না দুদক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শফিউল্লাহ গত বছরের ৪ নভেম্বর রাজধানীর রমনা মডেল থানায় বাদী হয়ে শহীদ খানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ৫)। ২০১৭ সালে শহীদ খানের সাবেক সহধর্মিনী হাসিনা বেগমের এক অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সহকারী পরিচালক শফিউল্লাহকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় দুদক। এরপর শহীদ খান ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কমিশনের সচিব বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। কমিশন সেই সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুন্ধানের জন্য ওই বছরের ১ মার্চ দুদক কর্মকর্তা শফিউল্লাহকে আবারও অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর অনুসন্ধান কর্মকর্তা সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করে মামলা দায়েরের জন্য কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, শহীদ খানের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ২০৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদর্শিত আছে। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে ৭০ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৯ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট ৭৪ লাখ ১৬ হাজার ৪০৯ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। ফলে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন শহীদ খান।

এদিকে, আয়কর নথিতে মো. শহীদ খান ৭৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৩ টাকার আয়কর প্রদর্শন করেছেন। এছাড়া তিনি ৬ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছেন মর্মে দালিলিক প্রমাণ দিয়েছেন। ফলে তার মোট আয় ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৩ টাকা। কিন্তু তিনি তার আয়কর নথিতে ২০১১-১২ করবর্ষে দোকান ভাড়া বাবদ অগ্রিম ৭ লাখ টাকা ও সুদ বিহীন ঋণ হিসেবে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রদর্শন করেছেন। অনুসন্ধানে এর কোনো প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি।

এছাড়া ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৪ টাকার ব্যাংক ঋণ প্রদর্শন করেছেন শহীদ খান। কিন্তু ব্যাংক ঋণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব ঋণ পরিশোধ করায় তার কোনো ঋণ নেই। আবার বাকিতে ৮ লাখ ১০ হাজার ৭৩৩ টাকার মালামাল কেনার তথ্য প্রদর্শন করলেও এর কোনো তথ্যও উপস্থাপন করতে পারেননি তিনি। ফলে তার প্রদর্শিত মোট আয় থেকে আয়কর নথিতে প্রদর্শিত অগ্রিম ভাড়া, সুদবিহীন ঋণ, ব্যাংক ঋণ ও বাকিতে মালামাল কেনার তথ্য হিসেবে ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৭ টাকা বাদ যাবে। এগুলো বাদ দিয়ে তার মোট আয় দাঁড়ায় ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৪৬ টাকা। আর আয়কর নথি অনুযায়ী, তার মোট ব্যয় ১২ লাখ ৩০ হাজার ৩২২ টাকা। ফলে তার নিট আয় ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকা।

এদিকে, অনুসন্ধানে শহীদ খান ৭৪ লাখ ১৬ হাজার ৪০৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন বলে রেকর্ডপত্রে পাওয়া গেছে। ফলে ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৮৫ টাকার সম্পদ অসৎ উপায়ে উপার্জন করেছেন শহীদ। আর এই সম্পদের মালিকানা নিজ দখলে রেখে দুর্নীতি করেছেন। এ কারণে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

তবে মামলা করেই যেন দায় সেরেছে দুদক। মাত্র কয়েকশ গজ দূরে প্রতিদিন অফিস করলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আবার মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটও দেয়নি দুদক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে তাকে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এনবিআর কর্মকর্তার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ এনবিআরের ওই কর্মকর্তাকে যেন দ্রুত গ্রেফতার করা হয়, তার যাবতীয় ব্যবস্থা তিনি নেবেন বলেও আশ্বাস দেন।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর