Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে ভিড়, বাড়ছে বিক্রিও


৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২২

।। স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট ।।

ঢাকা:  অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ঘিরে বইপ্রেমীদের আশার পারদ থাকে সবকিছুর উপরে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মেলার প্রথম দিন থেকেই মেলায় ছুটে আসছেন দেশের নানা প্রান্তের বইপ্রেমী মানুষ। কেউ আসছেন বন্ধুদের সাথে, কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকায় এবার শুরু থেকেই প্রাণের মেলা বেশ প্রাণবন্ত। দিন যতই এগিয়ে যাচ্ছে মেলাও তত বেশি জমে উঠছে। দর্শনার্থীদের পাশাপাশি দিনে দিনে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। জমে উঠছে মেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত নানা আয়োজনও।

মেলার প্রবেশদ্বার খোলার পর থেকেই বিরামহীনভাবে তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রচারিত হচ্ছে বইমেলা বিষয়ে নানা তথ্য। সেখান থেকেই জানানো হচ্ছে এবারই প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়া ‘লেখক বলছি…’ মঞ্চে আজ কোনো কোনো লেখক সরাসরি কথা বলছেন পাঠকের সঙ্গে। এছড়াও মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয় ও বক্তাদের সম্পর্কেও জানানো হচ্ছে এখান থেকে।

সাপ্তাহিক কর্মদিবসে ৩টায় আর ছুটির দিন সকাল ১১টায় খুলে যায় মেলার প্রবেশ পথ। এর পর থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন বইপ্রেমীরা। তাদের দীপ্ত পদচারণায় সময় গড়ানোর সাথে সাথে মেলায় যেমন আসে প্রাণ-প্রাচুর্য্য, তেমনই মাসব্যাপী এ প্রাণের মেলার সময়ও কমে আসে।

এরই ধারাবাহিকতায় দেখতে দেখতে বাঙালির জাতীয় মননশীল ও সৃজনশীলতার সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হওয়া এবারের প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ অতিবাহিত করলো ৬ষ্ঠ দিন। রাত শেষে বৃহস্পতিবার এবারের মেলার প্রথম সপ্তাহের দিন। মেলার প্রথম সপ্তাহের আগের দিন পর্যন্ত মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মেলার বিভিন্ন প্রকাশনার সংস্থার প্রকাশকরা জানালেন- প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়, বাড়ছে বিক্রিও। তারা আরও বলেন, অতীতে কখনও প্রথম সপ্তাহের আগে বইমেলা তেমন জমে ওঠে না। কিন্তু এবারের দেশের রাজনৈতিক এবং সার্বিক পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় মেলা শুরু থেকেই জমে উঠবে-এমনই আশা ছিলো। সেটা না মেলা নিয়ে হতাশা নেই তাদের।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে কথা হলো নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জুয়েলের সাথে। তিনি বলেন, ‘পুরোদমে না হলেও বিক্রি শুরু হয়েছে মোটামুটি। প্রথম সপ্তাহে মেলার হালচাল বুঝে ওঠা কঠিন। তবু এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে, তাতে বলা যায়, এবারের মেলায় বিক্রি বেশ ভালো হবে। আশা করি, আগামীকাল বৃহষ্পতিবারই মেলা পুরোপুরি জমে উঠবে।’

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল বলেন, ‘প্রথম সপ্তাহের বেচাকেনায় গতবারের মেলার চেয়ে বেশি আশাবাদী। এবারের মেলা নিয়ে অন্যান্য বছরের তুলনায়ও বেশি আশাবাদী তারা। তিনি বলেন, বিক্রি বাড়লেও দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় বইয়ের পাঠক বাড়েনি।

এদিকে, বুধবার জমে ওঠে মেলা কেন্দ্রিক নানা আয়োজন। এর মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো যোগ হওয়া ‘লেখক বলছি…’ মঞ্চের আয়োজন ছিলো অন্যতম। এ আয়োজনের এদিনেও পাঁচজন লেখক মেলায় প্রকাশিত তাদের নতুন বই নিয়ে পাঠকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর মধ্যে প্রাবন্ধিক অজয় দাশগুপ্ত আলোচনা করেন বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তার লেখা ‘সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি’, কবি ফরিদ কবির আলোচনা করেন আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী মূলক বই ‘আমার গল্প’, কবি জাহানারা পারভীন আলোচনা করেন নালন্দা থেকে প্রকাশিত কবিতার বই ‘স্কুল বলতেই তোমাকেই বুঝি’, কবি চঞ্চল আশরাফ আলোচনা করেন বৈভব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘নির্বাচিত গল্প’ নিয়ে এবং কবি মন্দিরা এষ আলোচনা করেন জেব্রাক্রসিং থেকে প্রকাশিত ‘অরণ্যে মিথের পৃষ্ঠা’ নিয়ে।

এর আগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার মূল মঞ্চে বিকেল ৪টায় শুরু হয় ‘কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়: জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এ আয়োজনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিমল গুহ, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং শোয়াইব জিবরান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘প্রিয় ফুল খেলার দিন নয় অদ্য’ কিংবা ‘কমরেড নবযুগ কি আনবে না’ তার এসব অবিনাশী পঙ্ক্তিমালার মধ্যে আমাদের অনেকেরই মানস পুষ্টি অর্জন করেছিল ও আমরা এর মাধ্যমে সময়ের দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উপলব্ধি করেছিলাম, নবচৈতন্যের আলোকে। আমরা এসব কবিতার মর্মভেদী আবেদনকে অনুভব করেছিলাম জীবনকে মেলাবার আবেদন; প্রিয়ার সান্নিধ্য ও তার বাহুডোরকে পরিত্যাগ করে স্বপ্ন ছিঁড়ে জনমানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আকাক্সক্ষায়।

আলোচকরা বলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাংলা কবিতায় নতুন যুগের উদ্গাতা। তিনি জনমানুষের আকাংখাকে কবিতার শব্দে ও ছন্দে শিল্পরূপ দিয়েছেন। কবিতা তাঁর কাছে কোনো উপরিতলার প্রসাধন ছিল না বরং কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জীবন এবং একই সঙ্গে সমষ্টির জীবন যাপন করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে আসাদ চৌধুরী বলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবিতার মধ্য দিয়ে সময়কে ধারণ করেছেন। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও অনুবাদে তিনি রেখেছেন স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন এক ঘনিষ্ঠ সুহৃদ। তাঁর মতো কবিমানুষের জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির এ আয়োজন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রশংসনীয়।

এ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একই মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি ফারুক মাহমুদ এবং ফারহান ইশরাক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম এবং শিরিন ইসলাম। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবুবকর সিদ্দিক, স্বপ্না রায়, আজগর আলীম, শফিউল আলম রাজা, অনিমা মুক্তি গোমেজ। এ সংগীথ শিল্পীদের যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শাহ্নূর আলম রাজন (তবলা), এস. এম. রেজা বাবু (বাংলা ঢোল), ডালিম কুমার বড়–য়া (কী-বোর্ড), নির্মল কুমার দাস (দোতারা)।

বুধবারের নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, বুধবার মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বই এসেছে ১৫২টি। এর মধ্যে গল্প ৩১টি, উপন্যাস ২২টি, প্রবন্ধ ৪টি, কবিতা ৪০টি, গবেষণা ২টি, ছড়া ১০টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৩টি, মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক ৮টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৪টি, ভ্রমণ বিষয়ক ৩, ইতিহাস বিষয়ক ৩টি, রাজনীতি ১টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ২টি, রম্য ১টি, সায়েন্সফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য ১৩টি। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো-গ্রন্থকুটির প্রকাশিত মাহবুব সাদিকের ‘তিন শিকারীর গল্প’, আগামী প্রকাশনী প্রকাশিত মোহাম্মদ নাসিমের ‘সংসদের তিন প্রজন্ম’, কথা প্রকাশ এনেছে পলাশ মাহবুবের ‘কম বয়সি সন্ধ্যা’, সময় প্রকাশন এনেছে আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘নির্বাচন ও প্রশাসন’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. এনেছে নাসরীন জাহানের কবিতার বই ‘এসেছি সূর্যাস্ত থেকে’, দি রয়েল পাবলিশার্স এনেছে আহমদ মতিউর রহমানের ‘ভাষা আন্দোলনে পাঁচজন শহিদের জীবন কথা’, অনন্যা এনেছে মোস্তফা মামুনের কিশোরদের গল্প সংকলন ‘রাজু ভাই মাইনাস শেলী আপা’ ইত্যাদি।

নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
মেলার ষষ্ঠ দিন বিকেলে মেলার সোহওরায়ার্দী উদ্যান অংশের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আর গত ছয়দিনে এই মঞ্চে মোট ৩১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে।

বাংলা একাডেমির সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন
মেলার সপ্তমদিন আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’ বিষয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এতে গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

সারাবাংলা/একে/আরএফ 

 

 

অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ বইমেলা ২০১৯

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর