যন্ত্র প্রস্তুত, উদ্বোধনের অপেক্ষায় কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৮
।। সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প এলাকা থেকে: এবার টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে যাওয়া এই টানেল চট্টগ্রামের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করবে। এর মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ করার কাজে ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম)। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই যন্ত্রটির উদ্বোধন করবেন।
একই দিন টিবিএম মেশিন দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ তৈরির কাজ শুরু হবে। ১১ বছর আগে চট্টগ্রামে গিয়ে টানেলের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যা এবার রুপ নিতে যাচ্ছে বাস্তবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি লেন রোড টানেল নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী টিবিএম দিয়ে টানেল খনন কাজের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। এরইমধ্যে সেতু সচিব ও সেতু ভবনের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নকশা অনুযায়ী, টানেলের প্রবেশ পথ হবে এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজের সামনে। তারপর আড়াই কিলোমিটার মাটির তলদেশ দিয়ে চার লেনের সড়ক যাবে। টানেলের বহির্গমন পথ হবে আনোয়ারা প্রান্তে সারকারখানার কাছে।
চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের প্রথম টানেল নির্মাণ কাজ করছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দুটি টিউবে চার লেন টানেল সড়ক নির্মাণ করা হবে। টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকবে। নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার।
এর মধ্যে আনোয়োরা প্রান্তে ৭০০ মিটারের একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে, যা আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনীতে এসে চট্টগ্রাম আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়কের সাথে মিলিত হবে। টানেলের প্রবেশ প্রান্ত মিলিত হবে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে।
সংকট কেটেছে, কর্ণফুলীর সুড়ঙ্গপথে আশার আলো
টানেল নির্মাণে চীন থেকে আনা টিবিএম মেশিন পরীক্ষামূলক খনন কাজ সফলভাবে শুরু করেছে। এ কারণেই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রায় তিন তলা ভবন উচ্চতার দৈত্যাকৃতির এই মেশিন নদী তলদেশে স্বংক্রিয়ভাবে খনন করে এগিয়ে যেতে থাকবে। এই মেশিন দিয়ে সেগমেন্ট বসিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে।
টানেল নির্মাণের দায়িত্বে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ জানায়, টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে খনন শুরু করার জন্য ‘ওয়ার্কিং শ্যাফট’ এবং প্রয়োজনীয় ‘কাট অ্যান্ড কাভার’ অংশ নির্মাণ করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ থেকে আরও জানা গেছে, চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিংজিয়ান শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। গত বছর পর্যন্ত ৪২৫০ টি সেগমেন্ট নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ২০৬৮ টি সেগমেন্ট চট্টগ্রামে প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২২ সালে টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকেই টানেল দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন।
সারাবাংলা/এসএ/ইউজে/আরএফ/এসএমএন