Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এ কেমন বাবা!


৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৪২

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া নিজ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় সাবেক স্বামী সাহেদুল্লাহ চিশতীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা চেয়েছেন ওই শিশুর মা। এরইমধ্যে নিজ মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে রমনা থানায় মামলা করেছেন শিশুটির মা।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে শিশুটির মা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

ওই শিশুর মা বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি মামলা করেছি। মেয়ের সঙ্গে এরকম করতে পারে, এ কেমন বাবা? আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

তিনি বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে আমার ভাষা ও ভারসাম্য কিছুই ঠিক নাই। আমি কী বলব, কিছু বলতে পারছি না। আমাকে বেবি যা বলেছে, সেই কথার সঙ্গে ডক্টর সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন। যখন এ ঘটনা ঘটেছে ওই সময় তার সঙ্গে তার বাবা ছিল। সময়টা ছিল মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টা। ওকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে ডেকে নেয়। আমি তো যেতেই দেব না। যেহেতু বাবা আর ওইদিন তার গাড়িটা বিক্রি করে দেবে তাই শেষবারের জন্য মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতে চাইছে, তাই দিয়েছি। যদিও আমরা সেপারেট থাকি। বেবি আমার কাছে থাকে। মেয়েকে না দিতে চাইলে এর আগে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকা হয়। টর্চার করা হয়। মারধর করা হয়। এগুলো সে সবসময়ই করে আসছে। আমি কখনও মিডিয়ার কাছে যাইনি। একাধিক জিডি করেছি। ৯৯৯ তে ফোন করেছি। তবুও আইনি সহযোগিতা পাইনি। এগুলো ভিন্ন বিষয় ছিল।’

ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমি তাকে ডিভোর্স দেওয়ার পর আমার বেবি তার কাছে যে ৬ মাসের মতো ছিল, ওই সময় আমার বেবিকে ক্ষতি করেছে। একাধিকবার এবিউজ করেছে। এরপর বেবি আমার কাছে আসার পর বলেছিলাম, মা, তুমি আমার জন্য কান্না করতে না। তখন ও বলত, হ্যাঁ কান্না করতাম। রাতে আমার পেটে ব্যথা হইত, আবার একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় বমিও করেছিলাম। কেন পেটে ব্যথা হতো, তোমার পাপা কি করত? তখনই সে অনেক কান্নাকাটি করে এবং বলে পাপাকে কিছু করবা না তো, পাপাকে কিছু না করলে আমি বলব।

বিজ্ঞাপন

এ সময় শিক্ষার্থীর মা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘আমি পাপাকে কেন কিছু করব। তখন সে বলে, পাপা আমাকে…করেছে। প্রায়দিনই এরকম করেছে। আর বলেছে, তোমার মাকে কিছু বলবে না। তোমার মা আমাকে মেরে ফেলবে।’

এরপর অনেক্ষণ ওই মা কান্না করেন। এরপর বলেন, ‘একজন বাবা এরকম করতে পারে। ডক্টর যখন পরীক্ষা করছিলেন তখন মনে মনে ভাবছিলাম ডক্টর যাতে বলেন, কিছু হয়নি। কিন্তু না ডক্টর বলেই ফেললেন, বেবি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। একবার না এর আগে অনেকবার হয়েছে। কাউন্সিলর টু সিনিয়র ডক্টর পর্যন্ত সবাই পরীক্ষা করেছেন। আমার কাছে রিপোর্ট আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হি ইজ নট মাই হাজবেন্ড, হি ইজ নট মাই হাজবেন্ড। হি ইজ ফাদার অব মাই চাইল্ড বাট ফাদার হওয়ার যোগ্যতাও সে এখন আর রাখে না।  আই জাস্ট ওয়ান্ট টু কিল হিম বাট আইন আমি হাতে নেব না।’

তিনি কান্না করে বলেন, ‘তখন যদি বাচ্চা দুটোকে আমাকে দিত। আমার মেয়ের এ ঘটনা ঘটত না। আমার দুটো বাচ্চা অনেক ব্রিলিয়ান্ট। তারা অনেক ইনোসেন্ট।’

বাবার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওনি রিটায়ার্ড একজন আর্মি অফিসার। ডিভোর্স হওয়ার আগে আমার বাসায় ১৩ বছরের একটি কাজের মেয়ে ছিল তাকেও সে রেপড করেছে। ওই মেয়েটা প্রেগনেন্ট হয়েছিল। আরো অনেক কিছু হয়েছিল। আমাকেই সেটা সমাধান করতে হয়েছে। যার কারণেই আমি তাকে ডিভোর্স দেই। এরপর আমাকে সে কখনোই মুক্তি দেয়নি। আমি নতুন করে জীবন শুরু করব, সেটাও করতে দেয় না। এগুলো সব বাদ। আমার মেয়েকে এরকম করল। এর বিচার কে করবে, কি বিচার হবে। একজন বাবা হয়ে কি এটা করতে পারে, এটাও কি সম্ভব।’

আপনি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার জন্য মামলা করেছেন? এখন আপনার করণীয় কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন যদি এখন আমাকে সহযোগিতা না করে, তাহলে আই উইল কিল মাইসেলভ, ইয়েজ আই উইল কিল মাইসেলভ। অবশ্যই তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। আজকেও মেয়ের সাথে একই কাজ করেছে।

বিজ্ঞাপন

মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাহেদুল্লাহ চিশতী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা হোক। আমি দোষী হলে যে শাস্তি হবে তা মাথা পেতে নেব।’

জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ কমিশনার শেখ মারুফ হোসেন সরদার বলেন,  ‘এক ‍শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মা বাদী হয়ে বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মামলা হয়েছে, আসামি তো ধরা পড়বেই।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

আরও পড়ুন

মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবার বিরুদ্ধে মামলা
বাবার বিরুদ্ধে শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ

ধর্ষণ শিক্ষার্থী শিশু ধর্ষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর